আমি ২০১৫ সালে একটি
পত্রিকায় আর্টিক্যাল পড়েছিলাম। ভাসা ভাসা মনে আছে। একজন চাকুরীজীবী সিঙ্গেল মহিলা তার
জীবন ও সবকিছু একটা ট্রলি ব্যাগে ও একটা হ্যান্ড ব্যাগে রয়েছে। দুইটি ব্যাগে জীবন যাপন।
আইডিয়াটা চমৎকার বাস্তবায়ন আরও কষ্টকর। উল্লেখ্য মহিলাটি আমেরিকার একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।
সে একটা কোম্পানীর সফটওয়্যার মার্কেটিং করার জন্য এক স্থান হতে অন্য স্থানে এক দেশ
হতে অন্য দেশে ঘুরে বেড়াতে হয়। তার নিজের ফ্লাট নেই বা ভাড়া করা বাসা নেই। পিতামাতার
বাসায় গেলেও কিছুদিন থাকে তারপর পুনরায় হোটেল
হতে হোটেলে জীবন যাপন।
আমার এই লেখার আইডিয়া
আসল জুন ২০১৭ সালে কুষ্টিয়া হতে ঢাকায় পোস্টিং আসার পর লাগাতার ট্রাংক, সুটকেস ও বাক্সের
মালামাল বের করতে গিয়ে আমার স্ত্রী বলল, এমন জীবন যাপন কি সম্ভব? কোন মালামাল থাকবে
না। যা দরকার আমি ভাড়ায় ব্যবহার করব। কোন কিছু আমার মালিকানায় থাকবে না। এক জায়গা হতে
আরেক জায়গায় গেলে সেখানে কোন কাপড় ব্যতীত কোন মালামাল নিব না। সবকিছু ভাড়ায় ব্যবহার
করব। কোন কিছু ধোয়া, মোছা ও রক্ষণাবেক্ষণের চাপ থাকবে না। সরবরাহকারীরা সব করবে। আমি
বললাম বাংলাদেশে এই ধরনের জীবন যাপন শুনিনি। হোটেলে থাকলে সম্ভব। সমস্যা একটাই খরচ
অনেক। অন্য দেশের উপরের নিউজটি সম্পর্কে তাকে জানালাম। সে বলল ওয়াও। কিন্তু আমাদের
পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা তিনজন সন্তানের পিতামাতা।
আজকাল অনেক দেশেই
ভাড়া বাড়ীর সাথে সম্পূর্ণ ফার্নিচার, ইলেকট্রিক সামগ্রী, পর্দা, বালিশ ও তোষক ইত্যাদি
ঘরের আনুষঙ্গিক সকল সামগ্রীই দেয়া থাকে। সকল সামগ্রীর উপর ভাড়া ধরা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে
যে কোন সামগ্রী নষ্ট হলে তা ভাড়াটিয়াই মেরামত করবে। আমি যে সংস্থায় চাকুরী করি সেখানে
একটা ভাল বিষয় হল, তারা বাসার লাইট, ফ্যান, রান্নার চুলাসহ, সমস্ত ফার্নিচার প্রদান
করে। এতে অন্তত দীর্ঘদিন আমাকে পোস্টিং এর সাথে কোন ফার্নিচার বহন করতে হয়নি। এটাও
একটা বিশাল রিলিফ। ফার্নিচারের মধ্যে বাচ্চাদের ছোট ছোট পড়ার টেবিল ও কম্পিউটার টেবিল
বানাতে হয়েছে। দুই একটি চেয়ার করতে হয়েছে। এগুলো ব্যবস্থা বা ভাড়ায় পাওয়া গেলে ভাল
হত। ফ্রিজ, টিভি, কম্পিউটার, এসি, ওয়াশিং মেশিন ও ওভেন ইত্যাদি ভাড়ায় পাওয়া গেলে মন্দ
হত না। ঘন ঘন বদলী যাদের হতে হয় তাদের এসি, ওয়াশিং মেশিন, গিজার ইত্যাদি সামগ্রী লাগানো
ও খোলা একটা ভয়ানক চাপে ফেলে দেয়। তখন মনে হয় সবকিছু ছেড়ে দিয়ে সন্ন্যাসী জীবনে চলে
গেলে মন্দ হত না। জীবনটা সহজ সরল ও নির্ঝঞ্ঝাট করে নেয়া যেত। তবে সম্ভব। যদি আমরা কম
সামগ্রীতে অভ্যস্ত হতে পারি। এতে জীবনটা সহজ হবে। হয়ত বেশী দূরে নয় বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা ক্রমশ উন্নয়নের দিকে
যাচ্ছে। আমরাও অনেক বেশী ফ্রি ও নির্ঝঞ্ঝাট হতে পারব। আমার মনে আছে শুরুতে বলা সেই
মহিলা একটা হিসাব দিয়ে দেখিয়ে ছিল তার হোটেলে থাকা, হোটেলে খাওয়া কিছু বুদ্ধিমত্তার
সাথে চললে কিছু বেশী খরচ হলেও তা ভাড়া করা ফ্লাটে থাকার খরচের কাছাকাছি। যদি ছিমছাম
ও দায়িত্বহীন জীবন যাপন করা যায় তবে ফ্লাট ভাড়ার চেয়ে হোটেলে বসবাস মন্দ নয়। ঢাকা শহরে
১০০০ টাকা প্রতিদিন ভাড়ায় রুম পাওয়া যেতে পারে। ৫০০/৬০০ টাকায় প্রতিদিন খাওয়া জুটতে
পারে। এর পর বিভিন্ন ভিজিটে রুম ছেড়ে দিয়ে বা বন্ধু/বান্ধব আত্মীয় স্বজনের মাঝে মাঝে
দাওয়াতে খরচ সাশ্রয় হবে। এতে করে অবশ্য দ্রুত নতুন পরিস্থিতি ও পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর
অভ্যস্ততা অর্জন করতে হবে।
আমরা সবাই স্থিতিশীলতা
চাই তাই হোটেল জীবন পছন্দ না হওয়াই স্বাভাবিক। ছিমছাম সহজ সরল ও সবকিছু ভাড়ায় চলে এমন জীবন
যাপন করে দেখলে মন্দ হত না। কারণ একটা বাসা বা ফ্লাট মেনটেইন করা অনেক অনেক কাজের চাপ।
একা বা কাপলের পক্ষে বাসা গুছানো ও পরিচ্ছন্ন রাখার চাপে নাভিশ্বাস পরিস্থিতি হয়। যারা
সিঙ্গেল বা কাপল তারা সহজ সরল দায়িত্বহীন হোটেল জীবন যাপন করে দেখলে খুব মজা পাবেন।
হাতে অনেক সময় থাকবে। অনেক সৃজনশীল কাজ করা যাবে। আর কিছু না হোক বেড়িয়ে জীবনটাকে উপভোগ
করা যাবে।
No comments:
Post a Comment