Pages

Thursday, October 26, 2017

প্রাইভেট টিউশনে পড়ে উচ্চশিক্ষা লাভ

একবার বাসে যাওয়ার সময় সহযাত্রী হল একজন ব্যক্তি তা‌কে আমার চেনাজানা মনে হল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মনে  হল এই ব্যক্তিটি প্রায় পনের বছর আগের জানা‌শোনা। তখন আমরা যেখানে ছিলাম সেই প্রতিষ্ঠানের বিষ‌য়ে তার সাথে আলোচনা চল‌তে থাকল। হঠাত সে  আমার সিনিয়র একজনের নাম বললেন। তিনি কোথায় আছেন জান‌তে চাইল। আমার জানা নাই। তাই তা‌কে প‌রে জানাব বলে দিলাম। সে নিজের থেকে আলোচনায় আনল আমার সেই সিনিয়রের সাথে প্রাইভেট ভাবে তিনি মাস্টার্স পাশ করেছিলেন। আমার আগ্রহ বেড়ে গেল। আমি জান‌তে চাইলাম। কিভাবে তারা পড়েছে।
তারপর আমি মজাদার পড়া‌শোনার পদ্ধতি জানতে পারলাম। এখনকার সম‌য়ের ডিসট্যান্ট লার্নিং এর সাথে মিল পাওয়া যাবে। তারা দুইজন প্রাইভেট ও পেশাদারী লোক‌দের পড়াশোনার উপযোগী প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হল। সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার ক্লাস করত।
তিনি বললেন, স্যার যখনি  গাড়ী নি‌য়ে যেতেন। আমা‌কে সাথে নিতেন। আর যখন যে‌তে পারতেন না। আমি যেতাম। প্রায়শই জোর ক‌রে আমা‌কে ট্যাক্সি ভাড়া দিতেন। ক্লাস শেষে অফিসের ব্রেক টাইমে যেসব বিষয়ে স্যার ক্লাস করেননি। সেই সব পাঠগুলো আমি তা‌কে পড়াতাম। পরীক্ষা একসাথে দিতাম। পরীক্ষার আগে স্যারের বাসায় বা অফিসে দুইজনে আলোচনা ক‌রে পড়তাম। আমি বললাম, আপনা‌দের ফলাফল কি?
 দুইজনেই  সেকেন্ড ক্লাস পেয়েছি। তবে স্যার আমার চে‌য়ে বেশী নম্বর পেয়েছিল।
চাকুরীজীবীদের এই  ধরনের পড়া‌শোনার বিষয়‌টি বেশ আশাব্যঞ্জক। সহযোগিতা নি‌য়ে পড়া‌শোনার এই সিস্টেমটি অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের আর্থিক উপার্জনের মাধ্যম হ‌তে পা‌রে। আমার এক নিকটাত্মীয় আছে । তার অল্প বয়সে বি‌য়ে হ‌য়ে‌ ছিল। তার আর্থিক অবস্থা ভাল। একদিন গল্প করতে গিয়ে  তিনি বললেন, এমন যদি হত। কেউ একজন আমা‌কে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিত। সপ্তাহে এক দুইদিন বাসায় এসে আমা‌কে পড়াবে। শুক্রবার ক‌রে কোন কোন মাসে এক দুইবার পরীক্ষা দি‌তে নি‌য়ে যাবে। এই  ধরনের প্যাকেজ ডিলে কাউকে পেয়েছেন কি। আমি জান‌তে চাইলাম। আপনি চেষ্টা করেছিলেন কি? অবশ্যই চেষ্টা করেছি। কিন্তু  মফস্বল শহরে এই ধরনের প্যাকেজে কাউকে পাওয়া যায়নি। আমি বললাম ফেইসবুকে দিতেন। পত্রিকায় বিঞ্জপ্তি দিতেন নিশ্চয়ই কাউকে পেতেন। আবার অনেক মিডিয়া আছেন। তারাও যোগাড় করতে পারত। ঢাকায় হয়ত সম্ভব কিন্তু মফস্বলে সম্ভব নয়। আর একটি ব্যক্তি আছে মেট্রিক পাশ করেছেন। ইন্টারমিডিয়েট পাশ হয়নি। এখন হা‌তে টাকা হ‌য়ে‌ছে। ব্যবসায় উন্নতি হ‌য়ে‌ছে। তার মনে হল ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলে ও ডিগ্রি পাশ করলে তার একটা শিক্ষিত ও ভাল পরিবারের পাত্রী জুটবে। এছাড়া শিক্ষিত মা হলে ভবিষ্যতে বাচ্চারাও উচ্চশিক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
কম শিক্ষিত ব্যবসায়ী এই‌ যুবক পড়‌তে চায়। কিন্তু তার সময় নাই।‌ তবে সারা দিনের কাজ শেষে রা‌তে যখন সে বিনোদ‌নের জন্য টি‌ভি দেখতে বসে তখন তা‌কে কেউ এক দুই ঘণ্টা পড়িয়ে গেলে মন্দ হয় না। তারপর পরীক্ষার দিনক্ষণ খেয়াল রেখে আগের দিন পরীক্ষা দি‌তে নি‌য়ে গেলে মন্দ হয়না। ব্যবসায়ী‌টি পড়া‌শোনার প্রয়োজন সমাজে তার ইজ্জতের জন্য। এমনকি ব্যবসায়ী‌টি তার ব্যবসার ধরনের সাথে মিল রেখে সেই ধরনের বিষয় নি‌য়ে পড়তে পারে। ২০১৭ সালের জুন মাসে সপরিবারে ঢাকায় এসে আমি বাচ্চা‌দের জন্য হাউজ টিউটর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অথচ দেশে কিন্তু বেকার যুবক যুবতীর অভাব নেই। অত:পর আমার ছেলে ফেইসবুক থেকে একটা মোবাইল নম্বর দিল। সেই মিডিয়া যোগাযোগ ক‌রে বুয়েটে পড়ুয়া হাউজ টিউটর যোগাড় ক‌রে দিল। প‌রে জান‌তে পারলাম, যে মিডিয়া যোগা‌যোগ ক‌রে দিয়েছে তারা টিউটরের প্রথম মাসের  ইনকাম হ‌তে অর্ধেক টাকা নেয়। এই  ধরনের  কাজ কেমন কেমন মনে হলেও আমার কাছে ভালই মনে হ‌য়ে‌ছে। কারণ পরিচিত কেউ আমা‌কে টিউশন মাস্টার যোগাড় ক‌রে দি‌তে পারছিল না। তাই সেই ফেইসবু‌কের মিডিয়ার উপর আমি সন্তুষ্ট। তারা সাত দিনে শিক্ষক ঠিক ক‌রে দিল। পত্র পত্রিকায় টিউশন চাইশিক্ষক চাইএই ধরনের বিঞ্জপ্তি দেখা যায়। তবে বাসায় পড়াশোনা করিয়ে ইন্টার মিডিয়েট পাশ করাতে চাই বা টিউটর আবশ্যকএই ধরনের আইডিয়া কেমন হবে জানি না। কিন্তু এতে অনেক বেকার শিক্ষিত যুবকের কর্মসংস্থান হবে তা নির্ধিদ্বায় বলে দেয়া যায়।
অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান তাদের এ্যাম্প্লয়িদের অফিস টাইমের পরে প্রশিক্ষক এনে তাদের প্রতিষ্ঠানের উপযোগী বিষয়ের উপর পড়াশোনার আয়োজন করাতে পারেন। সবাইকে আরও উচ্চশিক্ষিত করতে পারেন। সেই ব্যবস্থা করতে পারলে এতে হিউম্যান রিসোর্স উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের এ্যাম্প্লয়িদের মান উন্নয়ন হবে। প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হবে। একই ভাবে কোন প্রাইভেট স্কুল তারা শিক্ষকদের স্কুল শেষে বাইরে থেকে প্রশিক্ষক এনে বিএ্যাড ও এমএ্যাড পড়াতে পারে।

শিক্ষিত বেকারদের আয় রোজকার বাড়াতে হোম সার্ভিস ডিগ্রি চালুর পদ্ধতিটি ব্যবসায়ী মডেল হিসাবেও খারাপ হবে না। অনেকে এ বিষয়ে ভেবে দেখতে পারেন।

No comments:

Post a Comment