Pages

Thursday, October 12, 2017

জীবন যাত্রা: শহরের প্রাইভেট কারের চালক ও গ্রামের রিক্সা চালক

আমি গত সেপ্টেম্বর ২০১৭ মাসের শেষ সপ্তাহে আমার গ্রামের বাড়ী কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় যাই। পথে চান্দলা বাজার নামক স্থান হতে গ্রামের বাড়ী যাওয়ার জন্য রিক্সা নেই। আমাদের গ্রামের প্রায় শতভাগ রিক্সাই ব্যাটারি চালিত। তেমনি একটি ব্যাটারি চালিত রিক্সায় উঠলাম। রিক্সা গ্রামের রাস্তায় চলছে। হঠাৎ করে খেয়াল করলাম। রিকশাওয়ালার কাপড় চোপড় পরিষ্কার। নীল জিনসের প্যান্ট পড়া। লাল জামা গায়ে। হাতে ঘড়ি। শার্টের পকেটে স্মার্ট ফোন। এই ২৫/২৬ বছরের গ্রামের রিকশাওয়ালার সাথে শহরে প্রাইভেট কার চালক যারা সাধারণত ১০,০০০ হবে ১৫,০০০ টাকা বেতন নিয়ে থাকে তাদের একটা পোষাকগত মিল পেলাম। এত ফিটফাট রিকশাওয়ালার আয় কত জানতে মন চাইল।
রিকশাওয়ালা জানাল সে প্রতি দিন ৬০০/৭০০ টাকার মত তার রোজগার হয়। এর মধ্যে ৫০ হতে ১০০ টাকা রিক্সার চার্জ বাবদ খরচ হয়। ছয় মাস পর পর ২২০০০ টাকা নতুন ব্যাটারি কেনার জন্য খরচ হয়। মাস হিসাবে প্রায় ৪০০০ টাকা। মনে করি চার্জ বাদে দিনে ৬০০ টাকা আয় ও মাসে আয় ১৮০০০ টাকা। ৪০০০ টাকা বাদ দিয়ে ১৪০০০ টাকা। অর্থাৎ ঢাকা শহরের প্রাইভেট কার চালকের বেতনের প্রায় সমান সমান।
ঢাকা শহরের প্রাইভেট কারের ড্রাইভাররা মালিকের বাসায় হয়তবা দুপুরের খাবার খায় মাঝে মাঝে রাতের খাবার খায়। অনেক মালিক থাকার জায়গা দিতে পারে। অনেকে পারে না। তাই এক দুইবেলা নিজের ব্যবস্থায় থাকার জন্য অনেক ড্রাইভারেরই ৩০০০/৪০০০ টাকা খরচ হয়। তাহলে কেমন হল ব্যাপারটা। গ্রামের রিক্সা চালক শহরের প্রাইভেট কারের ড্রাইভার হতে বেশী আয় করে থাকে। এটা কেমন হল। একটা ড্রাইভার অনেকেই মেট্রিক পাশ করেছে। টাকা খরচ করে শহরে থেকে গাড়ী চালনা শিখেছে। আর সে কিনা গ্রামের রিকশাওয়ালার সমান কামাই করছে।
একজন মোটামুটি শিক্ষিত যুবক টাকা খরচ করে ড্রাইভিং শিখে গ্রামের রিক্সা চালকের সমান আয় করলে তো ঠিক হল না। তবে এতে নিরাশ হবার কোন কারণ নেই। একজন প্রাইভেট কার চালক ছোট গাড়ী দিয়ে স্টার্ট আপ করে তাই বেতন কম। পরে সে বাস ট্রাক চালিয়ে আরো বেশী আয় করতে পারবে। রিক্সা চালক রোদ বৃষ্টিতে ভিজে আয় রোজগার করে আর প্রাইভেট কার ড্রাইভার এসি গাড়ীতে গান শুনে শুনে সময় পার করে। প্রাইভেট কার চালক অনেক সময় কোন প্রতিষ্ঠানে বা সরকারী স্থায়ী চাকুরীও পেতে পারে। রিক্সা চালকের সুযোগটা সীমিত। আমি গ্রামের স্থানীয় রিক্সা চালকদের লক্ষ্য করলাম। এদের রুটের টার্ন এরাউন্ড দূরত্ব থাকে সাধারণত ৩০ মিনিট হতে ৬০ মিনিট। ১ থেকে ১০ কি: মি: এর মধ্যে। পায়ে চালানো হতে ব্যাটারি রিক্সায় দ্রুত যাতায়ত করা যায়। তাই শারীরিক কষ্ট কম ও আয় বেশী। গ্রামের রিক্সা চালক বর্তমান সময়ে কিস্তিতে রিক্সা কিনে থাকে। এক দুই বছরের মধ্যে  তারা নিজেরাই রিক্সার মালিক হতে পারে।
গ্রামের রিক্সা চালকদের কয়েকটি বিষয় বেশ ভাল লেগেছে। প্রথমত তাদের দৈনিক আয় শহরের কাছাকাছি। এরা বাড়ীতেই বেশী খায়। হোটেলে  কম খায়। এদের বেশীর ভাগই নিজেই রিক্সার মালিক। এদের ইট সিমেন্টের পাকা বাড়ী আছে। বাড়ীতে টিভি ফ্রিজ আছে। গ্রামের বাজার থেকে ওয়ালটন টিভি ফ্রিজ কিস্তিতে কিনেছে। এদের বাচ্চারা গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে পড়তে যায়। নিজেরা ও পরিবারের কাপড়ের মান ভাল। গ্রামীণ রিকশাওয়ালাদের পরিবর্তন গুলি বেশ আশাপ্রদ। অপর দিকে শহুরে রোজগেরে রিকশাওয়ালা বা গাড়ীর চালকরা বাইরে হোটেলে হোটেলে খায়। এদের পরিবার সাধারণত গ্রামে থাকে। এরা তিন চার মাসে বেশ কিছু টাকা নিয়ে ছুটি যায়। যারা কষ্ট করে শহরে পরিবার নিয়ে থাকে তারাও বস্তি এলাকায় অত্যন্ত নিন্মমানের জীবন যাপন করে।

গ্রামেরও শহরের জীবন যাত্রার মান বাড়ছে। আয়ের সুযোগ বাড়ছে। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে মানুষ অভ্যস্ত হচ্ছে। সন্তানদের স্কুল পাঠানোর আগ্রহ বেড়েছে। তাই শহর হতে গ্রাম এগিয়ে যাচ্ছে। বোকার মত শহরমুখী না হয়েও গ্রামেও সুন্দর জীবন যাপন সম্ভব।


No comments:

Post a Comment