এই যুগে আমরা ছেলে বুড়োরা রাত জাগি মোবাইল নিয়ে।
আগেও কিন্তু আমরা রাত জাগতাম। সেটা লুকানো যাবে না। কারণ যুগে যুগে সবাই কম বেশী
অননুউৎপাশীল কাজে রাত কাটিয়েছে। মাঝে মাঝে দস্যু বনহুর ও মাসুদ রানা পড়ে সারা রাত
কাটিয়ে দিয়েছি। ছোট রেডিও বা ট্রানজিস্টার যখন আসল তখন আবার বিদেশী রেডিও চ্যানেল
শোনা নিয়ে রাত জাগা। মাঝে মাঝে রেডিওতে টেস্ট ক্রিকেট শুনতে থাকা। ইংল্যান্ডে খেলা হলে রেডিও শুনেই
রাত জাগা। টিভি যখন আসল তখন রাত ১২ টা
পর্যন্ত দেখা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়াল। মাঝে সাদা কালো টিভিতে রাত জেগে ফুটবল
খেলা দেখতাম। অনেক সময় টুয়েন্টি নাইন কার্ড খেলে রাত পার। ভিসিআরের আগমনে হিন্দি
ছবি দেখতে দেখতে রাত পার। অনেক টিভি চ্যানেল আসল। চ্যানেল বদলী করতে করতে রাত পার
হল। আসল ভিসিপি ও ডিভিডি। ভিসিআরের পর পরিষ্কার ঝকঝকে ছবি দেখতে কত আনন্দ। ছবি
দেখতে দেখতে রাত পার। এর পর আসল ইন্টারনেট। ভাল মন্দ ব্রাউজ করতে করতে পুনরায় রাত
পার।
এক সময় আসল ইয়াহু চ্যাট। এটাও অনেক
রাত পার করে দিত। মোবাইল কোম্পানী ঘোষণা দিল রাতে প্রায় ফ্রি বা কম পয়সায় কথা।
শুরু হল বন্ধু ও প্রেমিক/প্রেমিকার রাত জাগা। ইন্টারনেট ও ফোনে রাত জাগা চলতে
চলতে চলে আসল স্মার্ট ফোন। কম্পিউটার ও ল্যাপটপের যাবতীয় কিছুই যেন এর মাধ্যমে
করা যেতে লাগল। স্মার্ট ফোনের সাথে চ্যাটিং, ফেইস বুক, ইউটিউব চলতে
থাকল। আগে রাত রাগা হত। বসে শুয়ে টিভি দেখে। কম্পিউটারে রাত জাগা অবশ্য বিছানায়
শুয়ে করা যেত না। ভয়াবহ ভাবে রাত জাগাটা এখন শুরৃ হল স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে। রাতে বিছনায় শুয়ে শুয়ে ফেইস বুক, চ্যাটিং, ব্রাউজিং, ইউটিউব ভিডিও চলছে। রাত কখন পার হচ্ছে টের পাওয়া যাচ্ছে না। আগে দস্যু বনহুর ও
মাসুদ রানা পড়তে পড়তে অনেক সময় যখন হুশ হল তখন হয়ত দেখা গেল রাত দুইটা বা তিনটা।
আজ যখন স্ত্রী বলে, “ছেলেদের রুমে লাইট জ্বলছে। ঘুমাতে
বল”। তখন আমার নিজের সময়টা মনে পড়ে। বাবা মা বলত, “রাত জাগছ কেন। ঘুমাও। সকালে উঠতে হবে। স্কুলে যেতে হবে”। আজ একই ভাবে ছেলেদের বলি, “বাবা লাইট অফ করে
ঘুমিয়ে পড়। সকালে স্কুল আছে”। আমার মতই ছেলেরা উত্তর দেয়, “কিছুক্ষণের মধ্যেই
ঘুমিয়ে পড়ছি”। আমি জানি। আমি ঘুমিয়ে পড়ব। তাদের কিছুক্ষণ শেষ হবে মাঝ রাতে। ক্যাডেট কলেজে
পড়শোনারত থাকাকালে অনেক সময় অনেক রাতে ঘুম থেকে উঠে স্টোরি বুক পড়তাম। কিন্তু সকালে উঠে পিটিতে যেতে হত। কোন মাফ
নেই। আজ ছেলেদের রাত জাগা ও তাদের বয়সে আমার রাত জাগায় পার্থক্য হল আমাদের হাতে বই
ছিল। তাদের হাতে আছে স্মার্ট ফোন, ট্যাব ও
কম্পিউটার/ল্যাপটপ।
আমি চাকুরীর আগের সময়গুলোতে আমার
সিনিয়ররা সব সময় বই পড়তে বলতেন। আরও বলতেন বিছানার পাশে বই রাখতে ও ঘুমানোর আগে বই
পড়তে। ঘুম না আসলে বই পড়তে। কঠিন বই নিলে কিছুক্ষণ পড়ার পরই ঘুম চলে আসত।
আজ আমাদের বিছানার পাশে বই নয় আছে
স্মার্ট ফোন। এই ফোনে বইও পড়া যায়। আমাদের সকলের আবার একটি বই বা বুক অনেক বেশী
প্রিয় আর তা হল ফেইসবুক। আমরা আগে ঘুম না আসলে বই খুলতাম। ঘুম চলে আসত। আজ ফেইসবুক এরূপ নেশার খেলা। উল্টো
ঘুমাতে যাওয়ার আগে কেউ যদি ভাবে একটু ফেইস বুকটা দেখে নেই। তখন একটু আর একটু থাকে না। এ দৃশ্যটা আজ স্বাভাবিক।
স্বামী ও স্ত্রী বিছানায় শুয়ে আছে। দুইজনই স্মার্ট ফোন নিয়ে ব্যস্ত। কোন কিছু
নিয়ে রাত জাগা আগেও অনেকের অভ্যাস ছিল। এখন প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে ভিন্ন
আঙ্গিকে রাত জাগা চলছে। আমরা যেভাবে রাত জাগি না কেন এটা শরীরের জন্য ভাল নয়। এটাই
বড় কথা। আমি আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগেই বেড রুম থেকে টিভি ও ডেস্কটপ কম্পিউটার
বের করে দিয়েছি। কিন্তু মোবাইলটাকে বের করতে পারিনি। তবে আমরা স্বাস্থ্য সচেতনরা
দুটি কাজ করতে পারি। এক: মোবাইল ফোন রাতে বন্ধ রাখতে পারি। অপর কাজটি করতে পারি ফোনটি বিছানা
থেকে দুরে রাখা। কারণ "স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল" এই বানী আজও অম্লান
হয়েই আছে।
No comments:
Post a Comment