আদম ব্যাপারী ও দালালে দেশটা ভরে গেছে। বিদেশে গমন ইচ্ছুক যুবক
যুবতীদের দালালের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা সামাজিকভাবে কিছু করতে পারি। কয়েকটি গ্রামকে নিয়ে একটি
স্থানীয় ভাবে অলাভজনক সমিতি তৈরি করা যায়। সমাজের বিত্তবানরা সমিতি পরিচালনার জন্য আর্থিক সাহায্য
দিতে পারেন। সমিতি পরিচালনার জন্য বিদেশের অভিঞ্জতা সম্পন্ন সৎ দুই/একজন মানুষকে নিয়োগ দেয়া যায়। সমিতিটি একটা অলাভজনক ভাবে ডোনার দ্বারা পরিচালিত হতে পারে। সমিতির কাজ হল গ্রামের
সহজ সরল যুবক যুবতীদের বিদেশ পাঠানোর নামে নিয়োজিত দালালদের কবল থেকে রক্ষা করা। যুবক যুবতী যারা বিদেশে যেতে চায় তাদের দক্ষতা অনুযায়ী তথ্য যাচাই
করা। দক্ষ দুই একজন ট্রাভেল এজেন্টের কাজ জানে এরূপ ব্যক্তিদের
দ্বারা প্রথমে আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের তথ্যাদি নিতে হবে। বাংলাদেশের সরকারের বিভিন্ন অফার ও প্রঞ্জাপন সর্বদা
হালনাগাদ তথ্যাদি এই কেন্দ্র অবগত থাকবে।
অধিকাংশ আদম ব্যাপারীদের দালালরা যা করে তারা নিয়মিত গ্রামে যায়। যুবক/যুবতীদের উদ্বুদ্ধ করে। দালাল যা যা টাকা খরচ হয় তার চেয়ে বেশী টাকা ফাঁকি দিয়ে নেয়। এই দালাল শ্রেণীটাকে সহজেই
দুর করা যাবে এই ধরনের
প্রবাসী নিয়োগ সমিতির মাধ্যমে। দালালরা যে কাজটা করে এই কাজটাই এই ধরনের অলাভজনক সমিতি
করতে পারে।
আমাদের দেশে প্রবাসে নিয়োগ নিয়ে এত
এত সমস্যা তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। প্রবাসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেডিক্যাল একটা গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় এখানেও আবার চলে বড় একটা বাণিজ্য। মেডিক্যালটা করার জন্য প্রথমে তাদের ঢাকায় কেন্দ্রীয়
একটা প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়। সেখান থেকে তারা রেজিস্ট্রি ঔই সংস্থার মাধ্যমে সরাসরি
মধ্য প্রাচ্যের রিক্রুটিং প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পন্ন করে। রিক্রুটিং প্রতিষ্ঠান আবার
বাংলাদেশের কয়েকটি তালিকাভুক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মাধ্যমে মেডিক্যাল সম্পন্ন করে
থাকে। এখানেও দালালরা একটা বাণিজ্য করে আর তা হল তারা ফিট ক্যান্ডিডেটকে বলে আপনি ফিট
নাই টাকা দেন আপনাকে ফিট করব। তখন টাকা নিয়ে ফিট লেখায়। সাধারণত বাংলাদেশের অনুমতি
প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আনফিট প্রার্থীকে ফিট করে না। এতে তাদের ডায়াগনস্টিক
সেন্টারের অনুমতি বাতিল হয়ে যাবে। দালালরা এখানে ধোঁকা দিয়ে টাকা খায়। প্লেনের টিকেটের ক্ষেত্রেও
বেশী টাকা নেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে লেবার গ্রহনকারী দেশ প্লেনের টিকেট
ফ্রি দিয়ে থাকে। এটা দালালরা গোপন করে প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়। এই ধরনের অনিয়ম বা প্রতারণা
করার সুযোগ দালালরা কেবলমাত্র তথ্য গোপন করেই করে থাকে। অথচ বর্তমানে ইন্টারনেট
ও তথ্য প্রযুক্তির যুগে এই ধরনের প্রতারণায় পরার কোন কারণ নেই। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। কয়েকজন শিক্ষিত সমাজ সেবক
নিয়েই গ্রামেই রিক্রুটিং এজেন্সি করা যায়। যার নাম আমি দিয়েছি “প্রবাসী নিয়োগ সামাজিক সমিতি”। এর মাধ্যমে এই অনিয়মগুলি দুর করা
যায়।
সমাজ সচেতন অনেক মানুষ স্কুল করেন। মাদ্রাসা করেন। ইত্যাদি অনেক প্রতিষ্ঠান
করেন। অনুগ্রহ করে সামর্থবানরা “প্রবাসী নিয়োগ সামাজিক
সমিতি” প্রতি ইউনিয়নে বা উপজেলায় একটি করে স্থাপন করতে পারেন। আপনি শুধু এতটুকু হিসাব
করে দেখুন আপনার উপজেলায় যদি মাসে দশজন দেশের বাইরে যায়। প্রত্যেকে যদি এক লক্ষ
টাকার স্থলে তিন লক্ষ টাকায় বিদেশে যায় তবে এই সমিতির মাধ্যমে আপনি প্রত্যেকের দুই
লক্ষ টাকার প্রতারণা ঠেকাতে পারবেন। ফলে প্রতি মাসে গরীব মানুষের ২০ লক্ষ টাকা বেচে যাবে। এই টাকাটায় গরীব পিতা মাতার
কি পরিমাণ সাফারিং হত যারা গ্রামে মাঝে মাঝে যান তারাই কেবল জানতে পারবেন।
আধুনিক ইন্টারনেটের সময়ে বিমান টিকেট
পেতে, টিকেট কাটতে ঢাকায় আসতে হয় না। ই-টিকেট কেটে প্রিন্ট করে নিলেই হল। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে
গ্রামে বসেই টিকিটের পেমেন্ট করা যায়। আজকাল অনেক উপজেলায় বিমান টিকেট কাটা যাচ্ছে। অনেক জেলা অফিস থেকে হজ্বের
যাবতীয় কাজ করা যাচ্ছে। এখন ট্রাভেল এজেন্সি ও রিক্রুটিং এজেন্সি ঢাকা বেইজ না
হলেও চলবে। গ্রাম, ইউনিয়ন
ও উপজেলার যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করা সম্ভব। পরিশেষে বলব আমরা সচেতন
নাগরিকরা আমাদের এলাকায় প্রবাসী নিয়োগ সমিতি বা অন্য নাম দিয়ে এজেন্সি করে দরিদ্র মানুষদের
প্রতারণার হাত থেকে আমরা রক্ষা করতে পারি।
No comments:
Post a Comment