জানুয়ারি ২০১৮ সালে শেষ সপ্তাহে
আমার এক পাঠক দুবাই থেকে ফোন করলেন। তিনি দুবাইয়ের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী
করেন। বাংলাদেশের কুমিল্লায় তার বাড়ী। বাড়ীতে স্ত্রী ও ছেলে আছে। তিনি অনেক বছর ধরে
দুবাই আছেন। ওখানে একটি প্রতিষ্ঠানে ইন হাউস জব করেন। অনেকের চেয়ে ভাল আছেন।
অনেক বাংলাদেশী দুবাইয়ে আছে যারা রাস্তা ও
কনস্ট্রাকশানে অনেক ঘাম ঝরিয়ে উপার্জন করে। সে হিসাবে তিনি ভাল আছেন। তাকে
সাধুবাদ দিলাম। তিনি আমার ফেইস বুক লেখা পড়ে আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য
উৎসাহিত হয়েছেন। কথা বলার জন্য আগ্রহী হয়েছেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, “আমরা যে এত
কষ্ট করে বিদেশে থেকে দেশের জন্য টাকা পাঠাচ্ছি।
তার কি কোন দাম নেই। মূল্যায়ন নেই”। আমি একটু অবাক হলাম। কেন বলছেন একথা।
অবশ্যই দেশ মূল্যায়ন করছে।
তাহলে বলি আপনাকে কষ্টটা। তিনি শুরু করলেন। গত বছর ছুটি শেষে আসার সময় বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে বলল, আপনি কবে বাংলাদেশে এসেছেন। আমি বললাম, তারিখটা আমার মনে নাই। পাসপোর্ট আপনার কাছে। ওখান থেকে বাংলাদেশে আসার তারিখ দেখে নেন প্লিজ। বাংলাদেশের এয়ারপোর্টের সেই লোক রেগে গেল। বলল, ঠিক আছে অপেক্ষা করেন। এভাবে কারণ ছাড়া আমাকে আধ ঘণ্টা দাড় করিয়ে রাখল। দীর্ঘদিন থেকে এই ঘটনায় অপমানিত বোধ করছিলাম। আপনাকে আজ বলে শান্তি পেলাম। তখন একটু ইমোশনাল হয়ে বললেন, “আমরা কি রেমিট্যন্স অবদানের সন্মানটুকু পেতে পারি না”
তাহলে বলি আপনাকে কষ্টটা। তিনি শুরু করলেন। গত বছর ছুটি শেষে আসার সময় বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে বলল, আপনি কবে বাংলাদেশে এসেছেন। আমি বললাম, তারিখটা আমার মনে নাই। পাসপোর্ট আপনার কাছে। ওখান থেকে বাংলাদেশে আসার তারিখ দেখে নেন প্লিজ। বাংলাদেশের এয়ারপোর্টের সেই লোক রেগে গেল। বলল, ঠিক আছে অপেক্ষা করেন। এভাবে কারণ ছাড়া আমাকে আধ ঘণ্টা দাড় করিয়ে রাখল। দীর্ঘদিন থেকে এই ঘটনায় অপমানিত বোধ করছিলাম। আপনাকে আজ বলে শান্তি পেলাম। তখন একটু ইমোশনাল হয়ে বললেন, “আমরা কি রেমিট্যন্স অবদানের সন্মানটুকু পেতে পারি না”
"রেমিট্যান্স সন্মান"।
এটা কি একটা টার্ম বা শব্দ সংযোজন হতে পারে তাদের সন্মান অর্জনের জন্য। পরে
আর একটা বিষয় তিনি জানালেন। তা হল, পাসপোর্টের
মেয়াদ শেষান্তে রিনিউ করতে পড়তে হয় আরেক যুদ্ধের মধ্যে। বাংলাদেশের দুবাইয়ের
পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ বলেন, আজ আসেন, তো কাল আসেন। এভাবে সময় ও খরচ বাড়তে থাকে। সে তখন দু:খ করে বলল, দুবাই
ওয়ালারা বাঙ্গালীদের চেকিং করা ও ভেরিফিকেশনে খুব সচেতন। কোন দাপ্তরিক কাজে দুবাই
ওয়ালারাও এত সময় নেয় না। আমাদের দেশের দাপ্তরিক ব্যবস্থাপনা
অনুন্নত অথবা তারা আমাদের অসন্মান করানোর জন্য ঘুরাতে থাকে। এটা শুনে আমি আর
একটু কষ্ট পেলাম।
আমাদের দেশ মধ্যম আয়ের দেশের পথে
আছে। জিডিপি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর পিছনে প্রবাসী ভাইদের অবদান অনেক। কয়েকটা
টাকা প্রাপ্তি আর একটু সুখের আশার তারা ভয়াবহ সেক্রিফাইজ করে যাচ্ছে। এরা যখন
অসন্মানিত হয় তখন সত্যিই তা কষ্টকর বিষয়।
করদাতা স্বীকৃত হচ্ছেন।
রেমিট্যান্স দাতারা স্বীকৃত হচ্ছেন না। কারণ তারা ছোট ছোট ইনকাম করে। এই ছোট ছোট
ইনকাম ও সেক্রিফাইজে দেশে ব্যবসা গড়ে উঠছে। গড়ে উঠছে ইমারত। গ্রামে টিনের ঘরগুলো
পাকা হচ্ছে। ঘরে ঘরে জীবন যাত্রার মান বাড়ছে। প্রবাসীদের ভাই বোন ছেলে মেয়ে স্কুলে
যাচ্ছে। তাদের কষ্টার্জিত টাকায় তাদের বাবা মারা স্বস্থি পাচ্ছে। অনেক প্রতিকূলতার
মধ্যে তারা স্ত্রীদের রেখে যাচ্ছে। নিজেরা বিরূপ পরিবেশে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
কঠিন আবহাওয়ার মধ্যে পরিশ্রম করছে। প্রতিটি প্রবাসীর উপর কম বেশী গড়ে ৪/৫ জন মানুষ
নির্ভরশীল। এই কারণে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যতার সীমা থেকে উঠে
এসেছে।
কস্টসহিঞ্চু ও সেকরিফাইজ করার এই
মানুষগুলোকে আমাদের অসন্মান করাটা অপরাধ নয়কি। অবশ্যই অপরাধ। তাদের কষ্টের
সন্মানটুকু দিতে হবে। স্কিলড ম্যান পাওয়ার পাঠাতে আমরা পারিনি এটা রাষ্ট্রের
সমস্যা। যারা আন স্কিলড হয়ে অনেক অনেক পরিশ্রম করছে। দেশ তাদের সন্মানের আসনে অবশ্যই
রাখতে হবে। অন্যথায় জাতি হিসাবে আমাদের সম্মান থাকবে না। বিদেশে বাংলাদেশীরা কেউ
বিপদে পড়লে তারা পরস্পরকে সাহায্য করে। তারপরও সহজে কিছু করতে পারে না। সব সময় ভয়
কখন কোন দোষে আরবরা তাদের বের করে দেয়। সমস্যা হল যত ছোট চাকুরী তত সমস্যা। তবে
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্কে আনা প্রয়োজন। তাদের মাঝে নিরাপত্তা
ও মনিটরিং বাড়ানো প্রয়োজন। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য রাষ্ট্র ও সমাজের করনীয়
অনেক বিষয় আছে। আর কিছু না হোক তাদের জন্য আমাদের “রেমিট্যান্স সন্মান” এর মানুষিকটা সমাজের সর্বস্তরে
চালু করতে হবে।
No comments:
Post a Comment