আমি
সামরিক সদস্য হিসাবে একবার একটি ট্রেনিং প্রতিষ্ঠানে মজাদার একটি ব্যবস্থা দেখে
ছিলাম। তা হল অফিসারদের টি বা স্ন্যাকস খাওয়ার স্থানে যাকে ফিল্ড মেস বলে সেখানে
সকল খাবার সাজানো আছে। সবাই যার যার মত নিয়ে খাবে। যাওয়ার সময় যার যার মত চিট লিখে
বাক্সে ফেলত। সপ্তাহ শেষে কোন চিট কম কিনা অডিট রিপোর্ট আসত। যারা লিখতে ভুলে গেছে
তারা চিট লিখত ও হিসাব মিলাত। মূলত সিগারেট খোর পার্টি হিসাবের গড়মিল বেশী করত।
যদি হিসাব একান্তই না মিলত ও কারো ভুল মনে না পড়ত তবে সবাই ভাগাভাগি করে ক্ষয়ক্ষতি
পেমেন্ট করত। এটা হত কালে ভদ্রে। বেশীর ভাগ সময়ই হিসাব মিলে যেত।
আমার
চাকুরী জীবনে চার বছর চাকুরীতে এই অনুশীলনটি ভাল লেগেছিল। কিছুদিন আগে ফেইসবুক
লেখনী থেকে জানলাম অনেক দেশে এই ধরনের অনেক শপ আছে যেটায় কোন দোকানদার নেই।
কুষ্টিয়ার কুমারখালির রেল স্টেশনে এক ব্যক্তি এই ধরনের সততা দোকান দিয়েছে যেখানে
গামছা লুঙ্গি ও অন্য কাপড় বিক্রি হয়। যারা কিনবে তারা মূল্য দেখে বাক্সে পরিশোধ
করে। মজার বিষয় হল এই দোকান থেকে কিছু হারানোর পর তার লাভও হচ্ছে। এই দুইটি ধারনার
পর আমার কাছে মনে হল আমাদের ভবিষত জেনারেশনের জন্য এই পদ্ধতিতে যাচ্ছি না কেন।
আমরা
প্রতিটি স্কুলে সততা ক্যান্টিন স্থাপন করতে পারি। স্কুলে এই ক্যান্টিন স্থাপন করলে
আমরা ছোট থেকে সততার ট্রেনিং দিতে পারব। স্কুলের প্রতিটি বাচ্চা তার খাতা, বই,চকলেট যাবতীয় অনেক দ্রব্যাদি এই ক্যান্টিনে পাবে।
সেই ক্যান্টিনে কোন দোকানদার থাকবে না। স্কুলের বাচ্চারা তাদের নিজেদের
সামগ্রীগুলো নিবে তার বিনিময়ে বাক্সে পেমেন্ট করবে। পণ্যের গায়ের মূল্য দেখে সে
অনুযায়ী টাকা বাক্সে রাখবে। যাদের কাছে টাকা থাকবে না তারা ক্রেডিটে কিনবে। তারা
তাদের চিটে পণ্যের নাম ইত্যাদি লিখে চিটের বাক্সে জমা করবে। মাস শেষে পেরেন্টস এর
কাছে বিল যাবে। এই সততা ক্যান্টিনে অনেক লস হতে পারে। এই লস প্রতি মাসে জমতে থাকবে
বছর শেষে এই লস গভর্নিং বোর্ডের মাধ্যমে সকল প্যারেন্টসকে ভাগ করে দেয়া হবে।
প্যারেন্টসরা সততা ক্যান্টিনের উক্ত টাকা পরিশোধের বিষয়ে অবগত থাকবেন এবং অনুমোদন
দিবেন। সততা ক্যান্টিন বাচ্চাদের উন্মুক্ত সামগ্রী মধ্যে রাখবে এবং তাদের লোভ
সংবরণ করতে শিখবে। আমরা বক্তৃতায় অনেক বড় বড় কথা বলি বাচ্চাদের লেকচার দেই কিন্তু
তাদের ট্রেনিং দেই না। এই ধরনের ব্যবহারিক ট্রেনিং বাচ্চাদের মূল্যবোধ পাল্টে
দিবে। বাচ্চারা বুঝবে তারা সুযোগ থাকলেও কোন দ্রব্য সততা ক্যান্টিন থেকে নিবে না।
একটা ফান টাইপ উক্তি আছে “চরিত্র মানেই সুযোগের অভাব”
তাই আমরা শিশুকাল হতে সুযোগ দিতে পারি যেন ছাত্র/ছাত্রীরা বুঝতে
পারে কিছু উন্মুক্ত কিছু পড়ে থাকলেও অনুমতি ছাড়া বা ক্রয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে না
গেলে তা অপরাধ হবে। অন্যায় হবে। তাদের কেউ বাধা দিবে না কোন দ্রব্যাদি তুলে নিতে
অথচ তারা দ্রব্যটির মূল্য পরিশোধ করে বা চিটে লিখে তবেই নিবে। এই ধরনের ক্যান্টিন
শিশুদের নিজেদের লোভ হতে নিয়ন্ত্রণ করবে। পিতা মাতাসহ ও অভিভাবক সংশ্লিষ্ট হওয়ার
কারণে শিশুদের পিতামাতারা তাদের সন্তানরা সততা ক্যান্টিনে যেন ভুল করে কোন কিছু
টাকা না দিয়ে বা মূল্য পরিশোধ করে নিয়ে না আসে এ বিষয়ে সন্তানদের বলবেন ও সচেতন
থাকবেন।
সততা
ক্যান্টিনে প্রতি মাসে মাসে অডিট হবে। অডিট হতে লাভ লস বের করা হবে। বছর শেষে সততা
ক্যান্টিনের লাভ ক্যান্টিনে পূন:বিনিযোগ হবে। আর লস হলে সকল মাসেরটা যোগ করে মোট
টাকা ছাত্র/ছাত্রীর কাছ থেকে গড়ে আদায় করে পরিশোধ করা হবে। সততা ক্যান্টিনের লসের
টাকাটা পিতা মাতা ও অভিভাবকের কাছ থেকে আদায় করা হবে। বাংলাদেশের দুই একটি স্কুলে
এ ধরনের ক্যান্টিন চালু থাকার কথা শুনেছি। এটা সারা দেশের সকল স্কুলের জন্য চালু
করা যেতে পারে। এর জন্য স্কুল প্রতি কিছু টাকা সরকার শিক্ষার বরাদ্ধ হতে পূর্ণ
করতে পারে। আবার অনেক সমাজ পতিরা তাদের এলাকার স্কুলে ও কলেজে চালু করতে পারেন।
অন্যান্য অনেক স্কুল ও কলেজ ছাত্র/ছাত্রী ও পিতা মাতার সহায়তায় এটি চালু করতে
পারে। সততা ক্যান্টিন বাস্তব ধর্মী সততা অনুশীলনের পরীক্ষাগার বিধায় বাংলাদেশের
সকল স্কুল কলেজে চালুর ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। কারণ পিতামাতা যাই থাকুন তারা সব
সময় চান তাদের ছেলে মেয়েরা সততার মধ্যে থাকুক।
No comments:
Post a Comment