আপনি শহরের কোন লাইব্রেরীতে যান
দেখবেন লক্ষাধিক বই আছে। প্রতিদিন পাঁচ ছয় জন পাঠক আসে। অথচ আজ থেকে ২০/২৫ বছর
আগেও লাইব্রেরীতে প্রচুর মানুষ দেখা যেত। অনেক বই আছে বছরের পর বছর কেউ পড়ে না।
অনেক লাইব্রেরীতে প্রতিবছর সরকারীভাবে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বরাদ্ধ থাকে। নতুন
বই কেনা হয়। নতুন বই কেনার পর অনেকে বই উল্টিয়েই দেখে না। পড়া তো দূরে থাক। আগে
মানুষের সময় ছিল। মানুষ বই পড়ত। এখন মানুষ বই খুব কম পড়ে। কোন কিছু জানতে হলে
গুগল থেকে তথ্য নেয়। আমরা কোন তথ্য জানার জন্য গোটা বই উল্টাতাম। এখন আর তা করতে
হয় না। গুগল সব তথ্য দিয়ে দেয়। প্রায় সেই সাথে
সাথে অডিও ভিজুয়াল ইউটিউব লিংকসহ। ফলে ছাপানো বইয়ের প্রয়োজন কমে গেছে।
ছাপানো বই পড়া কমে গেছে। যদি ডিমান্ড কমে থাকে তবে আমাদের সাপ্লাই কমিয়ে দিতে
হবে। তাহলে বই ছাপানোর কাজটা আমরা ডিজিটাল করে ফেলতে পারি। বাংলাদেশের বেশ
কয়েকটা দৈনিক পত্রিকা ঢাকার বাইরে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর থেকে প্রিন্ট হচ্ছে। একই
ভাবে অনলাইন আর্কাইভ থেকে পাঠকের ডিমান্ড অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিটি জেলা বা
উপজেলা থেকে বই বের হতে পারে। সেখানেই প্রিন্ট হবে। সেখান থেকে চাহিদাকারীর কাছে
চলে যাবে। এতে আমরা চাহিদার বাইরেই অপ্রয়োজনীয় বইয়ের প্রিন্ট বন্ধ করতে পারব।
প্রতিটি লাইব্রেরী পাঠক থেকে চাহিদা নিয়ে বই প্রিন্ট করে দিবে। ডিজিটাল বই
অনলাইনে সব সময় মজুদ থাকবে। মোবাইল ডিভাইস, কম্পিউটার ও
ল্যাপটপে যখন যার ইচ্ছে পড়তে পারবে। শুধু
বই করার প্রয়োজন হলে ঢাকা নীল ক্ষেতের মত কম্পিউটার ও রঙ্গিন প্রিন্টার নিয়ে
পার্টি প্রস্তুত থাকবে। চাহিদা অনুযায়ী প্রিন্ট করে হোম ডেলিভারি দিবে।
গতানুগতিক প্রিন্টিং থেকে খরচ বেশী গেলেও
এতে আমরা অপ্রয়োজনীয় বইয়ের প্রিন্টিং কমাতে পারব।
বইয়ের বিক্রি বাড়ানোটা অনেকটা
অসম্ভব। মানুষ ডিজিটাল ফরমেটে বই পড়তে দিনে দিনে দক্ষ হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে আছে
আগে আমি মোবাইল বা কম্পিউটারে বই পড়তে আগ্রহী ছিলাম না। কাগজের বই পড়তে অনেক
কমফোর্ট লাগত। ধীরে ধীরে ফেইসবুক মোবাইলে পত্রিকা পড়তে পড়তে ডিজিটাল ফরমেট অনেকটা
প্রয়োজনীয় উপাদান হয়ে গেছে। এখন বরং কাগজের বই থেকে ফন্ট সাইজ বড় ছোট করার কারণে
মোবাইলে পড়াটা এখন মন্দ নয়। অন্য লাইন পত্রিকাগুলো মোবাইলে ব্যাপকভাবে পড়া হচ্ছে।
কলাম আকারে বড় ফন্টে ডিজিটাল বই পড়তে মন্দ নয়। আবার বাজারে নতুন পুরাতন প্রায় সকল বই
পিডিএফ ফরমেটে আছে। আমরা যদি ডিজিটাল ফরমেটে পড়তে অভ্যস্ত হই তবে কেন আমরা প্রিন্ট
বই রাখব। টাকা ডিজিটালই ট্রান্সফার হচ্ছে তবুও সিনিয়র সিটিজেনরা কাগজের টাকা পছন্দ
করবে। যদি স্মার্ট ফোনের বদৌলতে গ্রামে গঞ্জে সকল ছেলে মেয়ে মোবাইলে ম্যাসেজ পড়া, তথ্য পড়া ইত্যাদিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে তবুও স্কুল ও কলেজে বইয়ের অনুশীলন থাকবে।
হয়ত বৃদ্ধ বয়সে বই আমরা বেশী পছন্দ করব। আমরা অবশ্য বাজারে দেখতে পাই বই এখন আগের
চেয়ে কম প্রিন্ট হচ্ছে। এই প্রিন্টটা কখনো ৫০০ বা ১০০০ কপি আকারে প্রিন্ট হয়। আমরা
এই প্রিন্টটাকে প্রেসে না রেখে স্থানীয় ভাবে চিন্তা করতে পারি। এই কারণে পত্রিকার
মত বিভিন্ন স্থান হতে প্রিন্টিং ভাবনা। এতে বই সরাসরি এক স্থান হতে অন্য স্থানে
পাঠানোর খরচ কমে যাবে। দিনকে দিন রঙ্গিন প্রিন্টের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এখনকার
প্রিন্টারে রঙ্গিন প্রিন্ট প্রায় প্রফেশনাল প্রিন্টের কাছাকাছি।
আমার প্রস্তাবে বই প্রিন্ট হবে
উপজেলা পর্যায়ে। ঢাকায় প্রিন্ট হবে আর তা সারা দেশে পরিবহন করা হবে। অনলাইন
আর্কাইভ থাকবে। সেই আর্কাইভ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী বই ছাপানো হবে। অনর্থক কোন বই
ছাপানো হবে না। এতে পাঠকের কাছে একটা চয়েস থাকবে। হয় তিনি ডিজিটাল ফরমেটে পড়বেন।
অন্যথায় প্রিন্ট করে পড়বেন। প্রতিটি উপজেলায় ডিজিটাল লাইব্রেরি ও প্রিন্টিং
স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রিন্টার ও
আধুনিক বই বাধাই করার ব্যবস্থাদি।
আমার এই পদ্ধতিটিতে অনেক প্রকাশক
নিজেদের আধুনিকায়নের জন্য কাজে লাগাতে পারবেন বলে আমি মনে করি।
No comments:
Post a Comment