Pages

Thursday, May 10, 2018

লেখক হিসাবে বই প্রকাশের পূর্বে প্রকাশক চিনুন


বাংলাদেশের মাসব্যাপী বইমেলা সত্যি চমৎকার ট্র্যাডিশন। এতে আমা‌দের বাংলাদেশের বই প্রকাশনা শিল্পে এক ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে। আমাদের দেশের সামর্থ্যের জন্য হোক বা পারিবারিক শিক্ষার অভাবেই হোক বই পড়াটা প্রাধান্য পায়নি। আর সে কারণে তেমন একটা বই কেনাবেচা বুক স্টলগুলোতে দেখা যায় না। বই বিক্রি হয়ে গেছে মেলা ভিত্তিক। মেলা ভিত্তিক হয়ে এরূপ হয়েছে কোন লেখক মেলা ব্যতীত অন্য কোন সময় কোন বই বের করতে চান না বা সাহসী হন না। প্রকাশকরাও একই দৃষ্টিভঙ্গিতে থাকেন। সারা বছর কাজ হচ্ছে পাঠ্য বই তৈরি হচ্ছে। দুর্দান্ত গতিতে তা বিক্রয় হচ্ছে। তেমনি শুধু মেলার জন্য অপেক্ষা না করে রেফারেন্স বই, অন্যান্য গল্প, কবিতা ও উপন্যাসের বই সারা বছর ছাপা ও বাজারজাত হওয়া প্রয়োজন।

বিভিন্ন সময় বইমেলা ঘুরে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের একটা তথ্য আমি আলোচনা ক‌রে পেলাম। এটা প্রকাশক সম্পর্ক‌ে। প্রকাশনা শিল্প‌ে নীচের ক্যাটাগরির প্রকাশক দেখা যায়।

১। প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক: এরা সাধারণত লেখক থেকে ছাপা‌নোর খরচ নেয় না। এরা প্রতিষ্ঠিত ও বিখ্যাত বই প্রকাশনার মাধ্যমে তা‌দের প্রফিট মার্জিন ভাল রাখে। নতুন লেখকরা দীর্ঘদিন এদের পিছনে ঘোরাঘু‌রি ক‌রে বই ছাপা‌তে সক্ষম হয়। এরা যেহেতু ব্যবসা সফল এরা প্রতিষ্ঠিত লেখক‌দের বই প্রাপ্তির জন্য চেষ্টা কর‌তে থা‌কে। এরা লেখক‌কে যথাযথ রয়াল‌টি প্রদান ক‌রে। ১০% প্রকাশক এই ক্যাটাগরির।

২। মধ্যম প্রকাশক: এদের কাজ ও প্রফিট মার্জিন মধ্যম মানের। এরা নতুন পুরাতন সকল ধরনের লেখক থেকে বই ছাপা‌নোর একটা খরচ আদায় ক‌রে নেয়। এদের অনেকে ২০০ - ৫০০ বই লেখক‌কে কিনতে বলে। লেখক‌কে এরা বই বিক্রয় মূল্যের ১০ থেকে ১৫% হা‌রে রয়ালটি দেয়। লেখক সাধারণত অভি‌যোগ ক‌রে এরা ঠিক ভাবে রয়াল‌টি পেমেন্ট করছে না। এদের উপর লেখকের আস্তা ও বিশ্বাস কম থা‌কে। ১০% প্রকাশক এই ক্যাটাগরির।

৩। দুর্বল প্রকাশক: এদের কাছে লেখক কম যায়। বিপণন ব্যবস্থা আর্থিক কারণে সাংঘাতিক দুর্বল। সারা দেশের সমস্ত জেলায় এদের বিপণন নাই। এরা সাধারণত পুরো টাকাটাই লেখক থেকে নেয়ার চেষ্টা ক‌রে। এদের মূল টার্গেট থা‌কে নতুন লেখক। এরা মাঝে মাঝে পাঠ্য বই ও র‌েফারেন্স বই ছাপিয়ে লাইফ সা‌পোর্ট‌ে থা‌কে। ৮০% প্রকাশক এই ক্যাটাগরির। এদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। এরা প্রকাশনা‌কে ভালবেসে ও সংসার চালানোর খরচটা পাওয়ার জন্য চেষ্টা ক‌রে যায়। এদের অনেক কাজ প্রতারণামূলক মনে হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশে নিজ বই নিজ প্রকাশনার প্রকাশ করার সংখ্যাটাও কম নয়। পরিশেষে বলব এখনকার প্রকাশকরা বই প্রচারণা লেখক‌দেরই কর‌তে বলেন। এটার কারণ বই বিক্রয় কম। পাঠক কম। লেখক বেশী। প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়া‌তে ৪০টির অধিক ভাষা আছে। গড়ে প্রতি বছর ৮০,০০০ হাজারের উপর নতুন বই বাজা‌রে আসে। আমা‌দের দেশেও ৫০০০ এর উপর নতুন বই বাজা‌রে আসে। তাই এত বই‌য়ের মাঝে আপনার বইটি পাঠক কেন কিনবে তার জন্য আপনার প্রচারণা জরুরী। কারণ প্রকাশকরা সে‌লি‌ব্রে‌টি লেখক‌দের বিজ্ঞাপন দি‌তে দি‌তে হয়রান থা‌কে। তাই সে‌লি‌ব্রে‌টি হওয়ার আগ পর্যন্ত আধুনিক লেখক‌দের নিজেদের তার পণ্য তা‌কেই বাজারজাত কর‌তে হবে লজ্জা পেলে হবে না। আশা করি তথ্য গুলি নয়া লেখক‌দের কাজে লাগবে।

প্রকাশনা শিল্পের সবচেয়ে দুর্বল দিক হল বাজারজাত করা। বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলায় অনেক অনেক লাইব্রেরী আছে। কিন্তু অবাক হতে হবে যে সে সমস্ত লাইব্রেরীগুলোতে বেশীরভাগ বই পাঠ্য বই বিক্রয় হয়। দীর্ঘদিন পড়ে থাকে বলে দোকানদাররা তেমন একটা বই রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করে না। তার উপর আরেক সমস্যা আর তা হল প্রকাশকরা লাইব্রেরীতে বই পাঠায় বাকীতে যা আদায় করতে প্রকাশককে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। তাই প্রকাশকরা বলে লাইব্রেরী ওয়ালারা গাড়ী ও বাড়ীর মালিক হচ্ছে। আর আমাদের চুলায় আগুন জ্বলে না।
বাস্তবিকতা হলো পাঠ্য বই বিক্রয় ব্যতীতই ফিচার বই বিক্রয় করার জন্য প্রতি জেলায় ও উপজেলায় প্রকাশকরা সমন্বিত বিতরণ ব্যবস্থা করতে পারলে প্রকাশনা শিল্পে গতি আনতে পারবে।

No comments:

Post a Comment