আমার জীবনে চাকুরীর শুরুতে দুইবার
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে যাত্রাবাড়ীর কাছে ছিনতাইকারীর পাল্লায় পরি। তারপর
আরেকবার ফার্মগেটে বাসের ভিতর থেকে ভিড় ঢেলে নামার পথে টাকাসহ মানিব্যাগ হারাই।
প্রথম জীবনে এই দুটো ছিনতাই ও পকেটমার হওয়ার
পর জীবনে একটা ব্যবস্থা অনুসরণ করে যাচ্ছি। তা হল যতটুকু সম্ভব কম পরিমাণ ক্যাশ
টাকা সাথে রাখা যায়। ২০/২১ বছর বয়সে টাকা ছিনতাই হওয়ার পর আমি নিজেও আমার সহকর্মীদের
নগদ টাকা সাথে নিয়ে ভ্রমণ করার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করি। আমি তাদের কার্ড বা
মোবাইল মানির মাধ্যমে চলাচলের উপদেশ দেই। আমার কাছে মনে হয় কম টাকায় কম রিস্ক।
আমি একটা গল্প শুনেছিলাম ইউএসএ তে নাকি আউট ল ও রেবেলদের থেকে বাঁচার জন্য
১০০/২০০ ডলার পকেটে রাখার পরামর্শ দিত।
অন্যথায় ডাকাত ও ছিনতাইকারী টাকা না পেয়ে রাগ করে ছুরি মেরে বা গুলি করে অঘটন
ঘটাতে পারে। এটা মাথায় থাকায় কার্ড ও মোবাইল মানি সাথে থাকলেও ৫০০/১০০০ টাকা
পকেটে রাখি। কারণ ঘটনা ঘটার আগে যতটুকু সাবধান হওয়া যায়। সৃষ্টির পর থেকে পৃথিবীতে
অনেক ক্ষতিকারক লোক ছিল। গতদিন গুলোতে ছিল। আজও আছে। আগামীতে থাকবে। তাই
প্রাথমিকভাবে সেলফ ডিফেন্স বা প্রটেকশন অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাকে এমন একটা
অবস্থায় আসতে হবে যখন সম্পদ বা অর্থসহ প্রটেকশন ছাড়া প্রাইভেটলি এক্সপোজ হব না।
আমার মাঝে মাঝে অবাক লাগে অনেক ব্যবসায়ী লক্ষ লক্ষ টাকা কোমরে জড়িয়ে রিক্সা, ভ্যান ও বাস গাড়ী করে চলে যাচ্ছে। ভয়ংকর বিপদ। আমার এক অতি নিকট আত্মীয়
ব্যবসা কারণে ঢাকা কুমিল্লা যাতায়াত করে। আর তার ঢাকা কুমিল্লা যাতায়াতের মূল
সময়ই হল ঢাকা থেকে লাস্ট বাসে রওয়ানা দেয়া। সবচেয়ে
ভয়ংকর বিষয় হল সে অনেক টাকা সাথে নিয়ে রওয়ানা হয়। তেমনি একবার কুমিল্লা থেকে ঢাকা
যাওয়ার গতানুগতিক কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বাসস্ট্যান্ডে হাজির হয়। হঠাৎ একটা মাইক্রো এসে
হাজির। ঢাকা যাবে। দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ওঠে পরে। মাইক্রোতে মহিলা ছিল ও আরো
যাত্রী ছিল। সাহসে উঠে পরে। ক্যান্টনমেন্ট হতে কিছুদূর গিয়ে নিমসারে এক নির্জন
জায়গায় গাড়ী থামায়। সামনে বসা ড্রাইভারসহ তিনজনের মধ্যে দুই জন নেমে এসে ছুড়ি ধরে।
বলে গাড়ী থেকে নাম। একজন একজন করে নামায় চেক করে টাকা পয়সা গয়না-ঘাটি নিয়ে
মাইক্রো চম্পট দেয়। মাইক্রোর নম্বর আমার আত্মীয়টি নোট করলেও কোন লাভ হয়নি পুলিশ
জানায় গাড়ীর নেম প্লেটে ভুয়া নম্বর ছিল। আমিও বিভিন্ন চোরাচালান বিরোধী অপারেশনে
দেখেছি চোরাচালানের ট্রাকে বা গাড়ীতে অনেক কয়টি নেম প্লেট ওরা রাখে। সেবার আমার
আত্মীয়টি মাত্র ২৫০০০ টাকা হাইজাকারদের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হয়। এই ঘটনার পর তাকে নগদ টাকা বহন করানো থেকে বিরত
করতে পেরেছি। তাকে শুধু বলেছিলাম, বোকারা ঠেকে শিখে। অনেক আগে বলছিলাম, কানে তুলেনি।
নগদ টাকা নিয়ে যারা ঘোরাঘুরি করে তাদের আমার খুব সাহসী মনে হয়। যদি টাকা বেশী
ক্যারি করতে হয় তবে যথাযথ স্কট নিয়ে ক্যারি করা ভাল। এখন অবশ্য অনেক অনেক
কোম্পানি ক্যাশ টাকা বাদ দিয়ে মোবাইল বা ব্যাংক পেমেন্টে চলে গেছে। সরকারও বেতন
ও পেনশন ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান শুরু করেছেন। এটা নিরাপত্তার দিক দিয়ে অনেক অনেক
ভাল উদ্যোগ সন্দেহ নাই। এতে অনেক রকম হয়রানী ও টাকা ছিনতাই থেকে মানুষ রক্ষা
পাবে। ব্যাংকে বেতন জমার সুবিধা হল যে কেউ তার প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা উত্তোলন করতে
পারছে। একবারে পুরো বেতন উত্তোলন ও মজুদ করার প্রয়োজন করতে হচ্ছে না। অনেক
অনেক ঘটনা আছে। পুরো পেনশনের টাকা হাইজাক হয়েছে। পুরো বেতনের টাকা হাইজাক হয়েছে।
তাই একবারে অনেক টাকা বহন কোন অবস্থায় সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ নয়।
আমি জানি অনেকে আমাকে তুলো ধুনো
করে দিবেন। দেশের আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন বিষয় না বলে, কেন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে
কথা বলছি। সরকারের দুর্বলতা ঢাকা হচ্ছে। আমি আমার অনেক আর্টিক্যালে লিখেছি
পৃথিবীর মানুষরা কোন কালে ভাল ছিল না। আগামীতে সন্ত্রাসমুক্ত পৃথিবীও আশা করা যায়
না। তাহলে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অনুভূতি ও সচেতনতা বাড়ানো অতি জরুরী।
আমি সীমিত টাকা নিয়ে চলাচলের জন্য
আলোচনা করলাম। এখন আর একটি বিষয় না বললেই নয়। একদিন আমি ধানমন্ডি এলাকায় ২৭ নম্বরে ট্রাফিক সিগনালে আটকে থাকা
অবস্থায় দেখলাম। গাড়ীতে বসা এক লোকের মোবাইল ছোঁ মেরে নিয়ে ছিনতাইকারী দৌড়ে পালিয়ে গেল। ঘটনা খেয়াল করে দেখলাম। ভদ্রলোক গাড়ীর জানালা খুলে মোবাইল ব্যবহার
করছেন এটা অপরাধ। ভদ্রলোক গাড়ী থেকে নেমে মোবাইল ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করলেও তেমন
সুবিধা করতে পারেননি। ছিনতাইকারি দক্ষতার সাথে হার্ডডেলস ক্রস করার মত
আইল্যান্ড ও বেরিয়ার ক্রস করে পগার পার
হল। দুঃখজনক। এই ঘটনায় কাকে কাকে দায়ী করা যায়? দেশের সরকারকে? আইন শৃঙ্খলা
নিয়ন্ত্রন না করার জন্য। অন্য দিকে তিনি কেন জানালা খুলে গাড়িতে মোবাইল
ব্যবহার করছিলেন?
গাড়ীতে এসি থাকলে গ্লাস ডাউন
ভাল অপশন নয়।
যদি গ্লাস দিয়ে গাড়ীতে চলতে সক্ষম না হই, তবে দামী মোবাইল রাস্তা ঘাটে ব্যবহার করা অনুচিত।
মোবাইল থাকলে এখন হয়ত অনেকে ঘড়ি ব্যবহার
করেন না। এক সময় দামী ঘড়ি ছিল টার্গেট। এখন মোবাইল।
আমি সব সময়, ধরেই নেই আমরা তেমন নিরাপদ নই। তাই অন্যকে দোষারোপ না করে নিজেদের
নিরাপত্তা বাড়ানোটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। পরিশেষে বলব, বিরূপ অবস্থায় নিজেদের
মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করে নিরাপদ থাকুন।
No comments:
Post a Comment