আমাদের সামাজিকতা রক্ষায় অনেক
আত্মীয় স্বজনের কাছে বেড়াতে যেতে হয়। দেখা সাক্ষাত হয়। পুরাতন স্মৃতিচারন হয়।
গল্পে গল্পে ফিরে যাই সেই ছোটবেলায়। চমৎকার সময় কাটে সন্দেহ নেই। বিপত্তিটা
বাঁধে তখনই যখন খাওয়ার সময় হয়। অনেক অনেক প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট রিচ খাবারের
মধ্যে পড়তে হয়। যারা শহুরে এবং ডেক্স জব করে তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা রীতিমত
চ্যালেঞ্জ। তাই আপনি যেখানে নিজে ডায়েট সচেতন, সেখানে
বড় বড় মুরগীর পিছ, অনেক পরিমাণ পোলাও দিয়ে দেয়; আপনার কেমন লাগবে। মহা চাপ নিশ্চয়ই। আমার কছে একটা অভ্যাস
অত্যন্ত প্রিয়। তা হল, খাবার সাজানো থাকবে। নিজের প্রয়োজন মত তুলে নেয়া। তবে আন্তরিকতার সাথে
কাউকে অফার করা যেতে পারে। কিন্তু জোর করে চাপিয়ে দেয়া নয়। এতে করে খাবার
খাওয়াটা আর আরামদায়ক থাকে না। তা হয়ে যায় অত্যাচার। সবাই মনে হয় এরূপ ভীতি থাকে।
ওখানে বা উনার সাথে গেলে ঠেসে খাওয়াবেন।
একবার বহুদিন পর এক আত্মীয়ের দাওয়াতে
গেলাম। আমাদের দেখে বললেন, এই তোমরা স্বামী-স্ত্রী
মোটা হয়ে গেছ। অনেকদিন পর দেখা। মনটা খারাপ হল। যাক গে অনেক গল্প হল। খাবার টেবিলে বসে আমাদের চোখ কপালে
উঠল। টেবিলে আছে বোরহানি, মুরগীর বিশাল সাইজ
রোস্ট,
গরুর গোশত, ডিম কোরমা, ইলিশ ভাজা, জর্দা, মিষ্টি দই ও রসগোল্লা। এই মেনু দেখে আমার অবস্থা খারাপ। জানতে চাইলাম সালাদ
কই। তারা বললেন, সালাদের বিকল্প বোরহানী আছে। তারপর
অবশ্য শসার চাক করে কাটা, লেবু ও কাচা মরিচ আসল। তারপর আমি বললাম সবজি আছে নাকি। তাদের চোখ কপালে উঠল। পোলাও সাথে
সবজির খাওয়াব। এটা হয় নাকি? আমি ফান করে বললাম, তাহলে বেগুন চাকা ভাজি রাখতেন বা পটল হাফ করে কেটে ভেজে রাখতেন। আধুনিক পাঁচ
তারকা ও রেস্টুরেন্ট গুলি লাঞ্চ বা ডিনারে ফ্রেশ সালাদ, সবজি,
ভাত/রুটি, প্রোটিন ও সবশেষে
ডেজার্টের আয়োজন করে থাকে। এটা স্বাস্থ্য সম্মত। এতে সব ক্যাটাগরির খাবারের ব্যাল্যান্স হয়। বোরহানী হলে ফ্রেশ সালাদ না হলে
চলবে। এটা ভাল ব্যবস্থাপনা
নয়। স্টিম/বেকড/ভাজা ভেজিটেবল পোলাওর সাথে চলতে পারে। এটা বেশীর ভাগ মানুষের
গ্রহণীয় পদ্ধতি নয়। সবার ধারনা হল,
পোলাওর সাথে সবজি দিলে মেনুটা সস্তা হয়ে গেল। সবজি পোলাওর সাথে লোভনীয় করে
উপস্থাপন করা যায়।
বড় বড় পিছ মাছ ও মাংস অনেকে দেন। এটা চরম অপচয়। অনেকে ভাবেন, বড়
পিছ না হলে সন্মান দেখানো হল না। ভুল। এটা মহা অপচয়। এমনকি পাঁচ তারকা হোটেলেও বড় বড় পিছ রাখা হয় না। পিছ থাকবে ছোট ছোট। এতে যার যে কয় পিছ প্রয়োজন, তা সে তুলে নিবে। একটা বড় মুরগীর পিছ তুলে নিবে তার তিন ভাগের এক ভাগ
খেল, বাকী ফেলে দিল। তা ঠিক নয়। যে কোন মাছ মাংশের পিছ থাকা প্রয়োজন ছোট। খাবার কম পড়লে সাধারনত লজ্জা লাগে। তাই পরিমান বেশী থাকুক। কিন্তু পিছ থাকুক ছোট ছোট। এতে প্লেটে প্লেটে মাছ বা মাংশ অর্ধেক খেয়ে ফেলে কেই
রাখবে না। অপচয় কম হবে। আবার অনেক আইটেম থাকলে সকল আইটেমের পিছ ছোট হওয়াটা অত্যাবশ্যক।
আধুনিক কালে বেশির ভাগ মানুষই
স্বাস্থ্য সচেতন। তাই কাউকে জোর করে খাওয়ানোর কিছু নাই। অনেকে বলেন, একদিন খেলে কিছু হবে না। তা বলে, জোর করে প্লেটে খাবার ঢেলে দেন। তা আদর নয়। অন্যায়। খাবারটা সবাই শান্তিমত নিজের মত খেতে চায়। তাই জোর করে খাওয়ানোটায় আনন্দ না হয়ে কস্টকর হয়। অনেকে খাবার না খেতে পারলে স্ট্রেট ফেলে দেয়। তারা কাজটা নিজের জন্য ভাল করল। তবে খাবার অপচয় খারাপ
কাজ। সে হিসাবে কাজটা ঠিক
হল না। অনেকে অপচয় না করার
জন্য জোর করে সময় নিয়ে খাবার ধীরে ধীরে কস্ট করে খায়। এর মধ্যে আমি পরি। কেউ জোর করে দিয়ে দিলে খাবার নস্ট করতে পারি না। তখন খাওয়াটা যেমন
কস্টকর হয়। তেমন মনটাও নিরানন্দ থাকে। এসব বিভিন্ন বিষয় চিন্তা করে আমার মাঝে একটা অভ্যাস করেছি। খাবার আইটেম অনুযায়ী অতিথিকে খেতে বলি। কিন্তু জোর করে তুলে দেই না।
আমরা যদি ১০/১২ জনের অধিক গেস্ট
পাই, তখন সবচেয়ে ভাল হয়,
টেবিলে সমস্ত আইটেম সাজিয়ে রাখা। গেস্টদের বুফে স্টাইলে তুলে নিতে বলতে হবে। এটা খাবার পরিবেশনকারী ও খাবার গ্রহনকারী দুইপক্ষের
জন্য ভাল। এতে খাবার অপচয় কম হবে।
পরিশেষে বলব, জোর করে খাবার পরিবেশনার চেয়ে সবাই নিজের মত নিজের আন্দাজে
খাবার গ্রহন করবে। এটাই সকলের কাম্য। কারো বাসায় গেলে বলবে, মোটা হয়ে যাচ্ছ। আবার অনেক খাবার দিয়ে বলবে, একদিন খেলে কিছু
হবে না। এটাও ঠিক না।
No comments:
Post a Comment