Pages

Thursday, June 7, 2018

উন্নয়নের পথে আগা‌তে হবে নিজেদের জো‌রে


আমা‌দের এলাকায় এটা নাই ওটা নাই। আমরা খাইতে পারি না। আমরা উপার্জন কর‌তে পারিনা।‌ আজ থেকে তিন চার বছর আগে যে কোন সমস্যায় আমারও মনে হত "সরকার এটা কর‌তে পারত" বা "এটা দি‌তে পারত"। এটা এখন আর তা মাথায় আসে না। আমার চিন্তা একটু পরিবর্তিত হ‌য়ে‌ছে।  আমার মনে হয় কোন সমস্যায় আমরা কি কর‌তে পারতাম বা কি করছি? সেটা আগে চিন্তা করতে হবে।

সরকারের করাটা আমলাতান্ত্রিক নিয়মে আবদ্ধ। সেটা এমন একটা প্রক্রিয়া যা স্বচ্ছতা ও জবাবদী‌হিতা পালন কর‌তে গি‌য়ে বিলম্বিত। কোন সরকারী কর্মকর্তা চাইলেই কোন কাজ কোন সৎ ও উদ্যমী মানুষ‌কে দিয়ে করা‌তে পারবে না। তা‌কে অবশ্য যথাযথ প্রক্রিয়া ও নিয়মের মধ্য দি‌য়ে যে‌তে হবে। অন্যথায় চাকুরীচু‌ত্যিসহ অন্যান্য বিপর্যয় আস‌তে পা‌রে। তাই সরকারের উপর নির্ভরশীলতা হল সিস্টেমের জটিলতার উপর নির্ভরশীলতা।
সারা পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষের সমস্যা হল সামাজিক ও স্থানীয়। তাই ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় নেতৃত্বের উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরী। এই  জন্য আমরা মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখি অমুক গ্রামের স্থানীয় মানুষরা এক কি‌লো মিটার ভাসমান সাঁকো তৈরি করেছে। অমুক গ্রামের যুবক/যুবতীরা বয়স্ক শিক্ষায় এগিয়ে এসেছে। অমুক প্রবাসী নিজের টাকায় একটা পাকা ব্রিজ তৈরি ক‌রে দিয়েছে। এরূপ অনেক অনেক সমস্যার সমাধান আমলাতান্ত্রিক সিস্টেমের বাইরে সমাধান করা যায়। আমা‌দের গ্রামের বাড়ীর সামনে একটা নদী ছিল। ছোট বেলা থেকে দেখতাম নদী পার হওয়ার জন্য একটা বাণিজ্য চলত। বাজার কমিটি গুদারা ঘাট বা খেয়া নৌকা পরিচালনা করত। তা‌দের টার্গেট ছিল একটা ব্রিজ করা। আমার আজও মনে আছে তারা প্রথমে বাঁশের সাঁকো বানায় যা দি‌য়ে মানুষ পার হয়। নৌকাও ছিল। তা দি‌য়ে মালামাল ও মটর সাইকেল পার করত। তারপর প্রশস্ত ক‌রে বাঁশের মাচা ক‌রে ব্রিজ বানাল। তার উপর দি‌য়ে মটর সাইক্যাল ও রিক্সা পারাপার শুরু হল। নৌকা পারাপার উঠে যে‌তে থাকল। এরপর একসময় দেখলাম কাঠ দি‌য়ে ব্রিজ হ‌য়ে গেল। তার উপর দি‌য়ে দিব্যি রিক্সা ও মটর সাইক্যাল পার হ‌তে লাগল। ১৯৯০ থেকে সেই  কাঠের ব্রিজ চালু হল। তার পর থেকে নিয়মিত চাঁদা দি‌য়ে মেরামত চল‌তে থাকল। ১৯৯৬ সালে এল‌জিইডির ব্রিজ করার পূর্ব পর্যন্ত। এটা এই  জন্য বললাম, সরকারী সেতু না হওয়ার আগ পর্যন্ত সংগ্রামী মানুষ পিছিয়ে ছিল না। তারা মানুষকে পারাপারের জন্য ফান্ড তৈরি করা ও ধাপে ধাপে নৌকা থেকে কাঠের ব্রিজ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন ক‌রে গেছে। আমি নিশ্চিত সরকারী ব্রিজ না হলে  সকলে মিলে এত দিনে লোহার ব্রিজ তৈরি ক‌রে ফেলত। তাই স্থানীয় সমস্যা স্থানীয় যুবকরাই সমাধানের পথে এগিয়ে নেয়। তারা প্রতিনিয়ত এগিয়ে যায়। এখানে যুব সমাজের শক্তি অসাধারণ। সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে নেতৃত্বে বিকাশ লাভ ক‌রে। কিছু উদ্যমী যুবক নেতৃত্ব দি‌য়ে সমাজের সমস্যার সমাধানগু‌লো ক‌রে ফেলে।

গ্রামে গঞ্জের স্কুল কলেজে ছেলেমেয়েদের কখ‌নো নির্ভরশীলতা শেখা‌নো যাবে না। গ্রামের স্কুলের ছেলেমেয়েরা বলল, স্যার আমা‌দের পানি পেরিয়ে স্কুলে আস‌তে হয়। শিক্ষকরা যদি বলে অপেক্ষা কর, একটু কষ্ট কর, সরকার ব্রিজ করবে। তা নয়। শিক্ষকের উচিত হবে ছাত্র‌দের নি‌য়ে সমস্যা‌টি দেখা। ছাত্র‌দের কাছে সমাধান চাওয়া। ব্রিজ হ‌তে পা‌রে বা নৌকা থাক‌তে পা‌রে। যাই সমাধান হোক, শিক্ষক স্থানীয় মানুষ‌দের নি‌য়ে সাঁকো তৈরির ব্যবস্থা কর‌তে পা‌রে। শিক্ষকরাই ছাত্র‌দের নেতৃত্ব‌ের গুণাবলী দি‌তে পা‌রে। পরিশেষে বলব, সমস্যা সমাধানে নির্ভরশীলতা নয় বরং এগিয়ে যে‌তে হবে বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে। তবেই সফলতা মিলবে। সরকার বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি নির্ভরশীলতা শুধু পিছনে টানবে। তাই যে কোন কাজে আগে প্র‌য়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। তার পর প্র‌য়োজনে অন্য সাহায্যের আশা করা যাবে। মহান সৃষ্টিকর্তাও কর্ম নি‌য়ে এক পা দি‌তে বলেন; বাকীটা তিনি এগিয়ে নেন। তাই স্থানীয় জনশক্তি তা‌দের সীমিত সম্পদ নি‌য়ে  এগিয়ে যে‌তে হবে। তবেই উন্নতি।


No comments:

Post a Comment