Pages

Friday, August 24, 2018

জীবন্ত দেয়াল


আজকাল বাউন্ডারি মাপার জন্য ডিজিটাল সিস্টেম আছে। প্রতিবেশী চাইলেই কি আমার সীমানা দখল করতে পারে। অবশ্যই না। প্রতিবেশীর সাথে সীমানা নিয়ে বিরোধ না করার জন্য সবাই প্রথমেই দেয়াল দেয়। টাকা পয়সা ভালই খরচ হয়। এই দেয়ালটা মাটি পর্যন্ত দিলে কেমন হয়। তাহলেও মাপ থাকে। বাকীটা না করলে চলে না। এখন সবাই বলবে চোর ঢুকবে। ডাকাত ঢুকবে। গরু ঢুকবে। ছাগল ঢুকবে। আসলেও তাই। ভয়াবহ সত্যি কথা। আমি গ্রিল করে দিলে কেমন হবে। মানুষ, গরু, ছাগল ঢুকতে পারবে না। এখন তাইলে একটি বিষয় বাকী থাকে তা হল প্রাইভেসী। বাইরে থেকে মানুষ দেখে ফেলবে ভিতরে কি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে গ্রিলের উপর বাঁশের বেড়া ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে?
আমরা সীমানা মাটি পর্যন্ত দেয়াল করে সীমানাটা ঠিক করে নিতে পারি। দেয়াল না দিয়ে গ্রিল করে প্রটেকশন করতে পারি। তাহলে এখন বাকী রইল বাড়ীর প্রাইভেসী। এটা কি করে রক্ষা করা সম্ভব। এটার জন্য দেয়াল লাগবে। এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। বেড়া না দিয়ে গ্রিলের বেড়ার চারিদিকে আমরা কি করতে পারি? যাতে প্রাইভেসী রক্ষা পাবে। সেটা আর কিছুই না। আমি জানি এটা অনেকের মাথার মধ্যে চলে এসেছে। আমরা জীবন্ত গাছ ও লতা পাতা লাগিয়ে সেই প্রাইভেসী রক্ষা করতে পারি। জীবন্ত গাছের বেড়া সব ধরনের প্রটেকশন দিতে পারবে যেহেতু তার সাথে আমরা গ্রিলের পরিকল্পনা করেছি। আমাদের শহর জীবনে গাছের বড় অভাব। অক্সিজেন ফ্যাক্টরি আমাদের শহরে তৈরি করতে হবে। আপনি আপনার বাড়ীর চারদিকে দেয়াল তুলে দিলেন। কি পরিমাণ ইট গেল চিন্তা করুন। তার চেয়ে এটা ভাল নয়কি মাটি থেকে ছয় থেকে বার ইঞ্চি পর্যন্ত আপনি ইট বসান বাকীটা খোলা রাখুন। এখন চারিদিকের বাউন্ডারির উপর হালকা ঢালাই দিয়ে গ্রিল বসিয়ে দিন। সেই গ্রিলগুলির উচ্চতা আপনার নিরাপত্তা ও প্রতিবেশীর ধরনের উপর নির্ধারন হতে পারে।
এবার গ্রিলের বেড়াটা অবলম্বন করে আপনি অরনামেন্টাল লতা জাতীয় গাছ আপনার বাউন্ডারির ভিতরে দিকে লাগিয়ে দিন। তবে আপনার সাথে আপনার যে প্রতিবেশী সীমানা মানবে না তাকে দেয়াল তুলতে বলুন। সেই ক্ষেত্রে আপনি দেয়াল তোলার খরচ কমাতে পারলেন। আপনার সাথে যে প্রতিবেশী গ্রিন দেয়ালে খুশী তার সাথে আপনি গ্রীল দেয়ালে থাকলেন।
আমরা সাধারণত মেহেদী গাছ, জবা গাছ, চিকন বাঁশ গাছ, বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ, লতা জাতীয় শাক সবজী গাছ আমরা বেড়া হিসাবে লাগাতে পারি। ইন্টারনেটে লিভিং ফেন্স নিয়ে সার্চ দিলে গাছ আর আইডিয়ার কোন ঘাটতি হবে না। বাকী যেটা ঘাটতি থাকবে তা হল আমাদের ইচ্ছা আমরা চাই কিনা। শহরের বাড়ীগুলোর সীমানা প্রাচীর একটা প্রয়োজনীয় বিষয়। তাই প্রাইভেসী ও নিরাপত্তা রক্ষা করে গ্রিল দিয়ে তার চারিদিকে গাছ লাগানো হতে পারে ভাল সলিউশন। এটা আমাদের সবুজের মাঝে থাকতে সহায়তা করবে। চিন্তা করুন দেশে যত উপশহর ও শহর হচ্ছে তাতে আপনারা বাউন্ডারি দেয়াল না দিয়ে জীবন্ত গাছের দেয়াল করলেন। আপনি পরিবেশের বিশাল উপকার করলেন; দেয়াল তৈরির খরচ কম করলেন। প্রতিবেশীর সাথে গাছময় সবুজ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। বিষয়টি নিশ্চয়ই বেশ মজাদার হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। দেয়াল না করার জন্য আপনি ইট বা সিমেন্ট বাঁচালেন। হিসাব করে দেখুন ইট তৈরি করার জন্য মাটি পুরানো থেকে আপনি বাঁচালেন। সিমেন্ট তৈরি করতে সীমিত প্রাকৃতিক গ্যাস পুড়ানো থেকে আপনি বাঁচালেন। এভাবে কি পরিমাণ ক্ষতি থেকে বাঁচালেন তা সত্যিই পরিবেশের জন্য বিশাল অবদান।
দেশের একলক্ষ মানুষ যদি এরূপ লিভিং ফেন্স তৈরি করে দেখুন হিসাব করে বিপুল পরিমাণ ইট ও সিমেন্ট বাঁচবে। কি পরিমাণ গাছ জন্মাবে। আর কি পরিমাণ অক্সিজেন বাড়বে তা হবে অতুলনীয়। এই ধরনের বেড়ায় যে লোহা ব্যবহার করা হবে পরবর্তীতে তা রিসাইক্যাল করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা যাবে। দেয়াল থেকে বাড়ীর সৌন্দর্যও বাড়ানো যাবে যদি গাছগুলি পরিচর্যা করে রাখা যায়। কয়েক বছর পর পর বাড়ির দেয়াল রং করাতে হয় তা থেকে খরচ মুক্ত। দেয়াল রং করার খরচ দিয়ে লেবার রেখে গাছে পরিচর্যা করলে বাড়ীর ময়লা দেয়ালের আভিজাত্য থেকে লিভিং দেয়ালের আভিজাত্য অনেক বেড়ে যাবে। পরিশেষে বৈষয়িক উষ্ণতার বিষয়ে চিন্তা করে আমরা জীবন্ত দেয়াল বা লিভিং ফেন্স বাস্তবায়ন করতে পারি।

No comments:

Post a Comment