সৌদি
আরবের জেদ্দার হোটেলে আমার স্ত্রী আমার কাছে জানতে চায় আচ্ছা হোটেলে সাদা
বালিশ, সাদা বিছানার চাদর ও সাদা টাওয়েল দেয়া হয় কেন?
আমার যে উত্তরটা মাথায় আসল তা হল, হয়ত
অ্যারোবিকরা হয়ত সাদা চাদর পছন্দ করে। পরে কলিকাতার হোটেলে যখন দেখলাম সাদা বালিশ,
চাদর ও টাওয়েল পেলাম; তখন মনে হয় এটা
একটা প্রাকটিস। তারপর বাংলাদেশের রিসোর্টে দেখলাম সাদার অনুশীলন।
সাদা চাদর অনুশীলন ক্যাডেট কলেজের হোস্টেলে
ছিল। মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ছিল। হাসপাতালে আছে। তাহলে এত সুন্দর রঙ্গিন রঙ্গিন
বিছানার চাদর গ্রহণীয় না হওয়ার কারণটা আমার জানা নেই। এটা হয়ত হোটেল ওয়েস্টিন, রেডিসন ও টিউলিপ চেইন হোটেল এবং রিসোর্ট গুলির এই সাদার অনুশীলনের
কারণ বলতে পারবে।
আমার কাছে মনে হয় হোটেল কর্তৃপক্ষের
ম্যানেজমেন্টে সুবিধা। প্রথম সুবিধা হল রঙ্গিন চাদর কেনা ও পছন্দের সমস্যা আছে।
দ্বিতীয় কারণ, রঙ্গিন চাদর ঘন ঘন ধোয়াধুয়ি করলে রং ফিকে
হয়ে যায়। সাদা কাপড় বার বার ধোয়া যায়। রং সাদা থেকে পানির জন্য লালচে হয়ে যায়।
তবে উঁচু মানের ডিটারজেন ব্যবহার করে সাদা কাপড় বেশীদিন ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে
কড়া ডিটারজেন বরং রঙ্গিন কাপড়কে তিন/চার ধোয়ায়ও ফ্যাকাসে করে দেয়। অপরদিকে
সাদা কাপড় ৫০ ধোয়াও রং ফ্যাকাসে হওয়ার সমস্যা নেই।এখন আসি ব্যবহারকারীর কি
সমস্যা। বাসা বাড়ীর বিছানার চাদর যেহেতু একই মানুষ ব্যবহার করে সেহেতু সপ্তাহে
একবার বা ময়লা হওয়ার উপর নির্ভর করে ধোয়া যায়। হালকা অপরিষ্কারে তেমন সমস্যা হয়
না। বিভিন্ন রেস্ট হাউজ ও নিন্মমানের হোটেলে রঙ্গিন বিছানার চাদর, বালিশ ও তোয়ালে দেখা যায়।
এখন আসি ব্যবহারকারীর জন্য স্বস্থির জায়গায়।
ধবধবে সাদা বালিশ, চাদর ও টাওয়েলে আছে কেমন যেন
পবিত্র ভাব। আনহাইজেনিক ও অপরিচ্ছন্নভাবে হোটেলওয়ালারা উপস্থাপন করতে পারবে
না। সাদা কাপড় ভাল ভাবে না ধুলে ধরা পরে যাবে। তাই ধোয়া ও সফেদ বিছানার চাদর,
বালিশ ও টাওয়েল এক নম্বর পছন্দ হবে এটা নিশ্চিত।
আমি বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক অফিসে ও গাড়ীতে সাদা
কাপড়ের ব্যবহার দেখেছি। সোফার উপরে সাদা কাভার ব্যবহার করতে দেখেছি। আমি ভারতের
বিভিন্ন সরকারী অফিসের সোফা ও চেয়ারে সাদা কাপড় ব্যবহার করতে দেখেছি। তাদের গাড়ীতে
সাদা তোয়ালের মত কাপড় ব্যবহার করতে দেখেছি। সাদা শুভ্রতা ও পরিষ্কার থাকার প্রতীক।
তাহলে দেখা যাচ্ছে হোটেল রুমের সব কিছু সাদা হউক
সবাই চায়। সবাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চায়। আমি আমার স্ত্রীকে প্রস্তাব করলাম। সব
কিছু হোয়াইট করলে কেমন হয়। বলল তাহলে কাপড় ধুতে ধুতে মারা পড়া লাগবে। সাদাকে সবাই
ভয় পায়, পরিষ্কার রাখার জন্য।
আমি একটা মজার প্রস্তাব করছি। আমরা নানা অফিসে
দেখি এক বস লাল রংয়ের পর্দা লাগিয়েছে। আরেক বস এসে সবুজ পর্দা লাগিয়েছে। আরেক বস
নীল পর্দা লাগিয়েছে। এভাবে কারণে ও অকারণে সরকারী অনেক টাকার অপচয় হয়। সরকারী একটা
নিয়ম করলে কেমন হয় সরকারী রেস্ট হাউজের পর্দা, সোফার কাভার,বিছানার চাদর, বালিশের কাভার ও তোয়ালে সব সাদা বা
সাদাতুল্য রং হবে। এতে মনে হয় একটু ঘন ঘন কাপড় পাল্টাতে হতে পারে। বেশী বেশী ধুতে
হবে। তবে আমি নিশ্চিত এতে সরকারী অপচয় রক্ষা হবে। সাদা রং পরিষ্কার রাখা খুবই
সমস্যা। তবে এটা ঠিক সাদার মাঝে আছে পবিত্রতা ও স্বচ্ছতা। সাদায় সব কিছু বুঝা যায়।
আর দেশের সরকারী সংস্থার সবকিছু পবিত্র করার জন্য সাদার প্রচলন অনেক জরুরী। অনেকে
আমার আইডিয়া ফানি ভাবতে পারেন। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখেন, সরকারী সমস্ত স্থাপনায় যেখানেই কাপড়ের ব্যবহার আছে সেখানেই সাদা কাপড়
ব্যবহার করেন। শুভ্রতা সরকারী ব্রান্ড হবে। আর স্বচ্ছতা আসবে সবকিছুতে। পরিশেষে
বলব শুভ্র, সুন্দর ও পবিত্র হোক আমাদের চারপাশ।
No comments:
Post a Comment