Pages

Thursday, October 18, 2018

নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়াটা কষ্টকর


আপনি গাড়ীর চালাবেন। সিটবেল্ট পড়ুন। মটর সাইকেল চালাবেন। হেলমেট পড়ুন। কনস্ট্রাকশনের কাজ করবেন। সেফটি গিয়ার পড়ুন। রান্না করবেন। গ্লাভস এ্যাপোন পড়ুন। আপনি বাগান করছেন। বুট ও গ্লাভস পড়ুন। আপনি প্লেট-ধুচ্ছেন। গ্লাভস পড়ুন। এগুলো আপনার নিরাপত্তার জন্য আপনি পড়বেন। রান্না করতে গিয়ে আগুনের ছ্যাকা খাওয়া পুড়ে যাওয়া অহরহ ঘটছে। সবজি কাটতে গিয়ে হাত কাটছে অহরহ। গরম খাবার ও গরম পানি গায়ে ছিটে পড়তে পারে। এতে এ্যাপ্রোন কিছুটা প্রটেকশন দিতে পারে। গ্লাভস প্রটেকশন দিতে পারে। অথচ দেখুন কোনটাই আরামদায়ক নয়।
সড়ক দু:ঘটনায় অনেকেই মারা যায়। বেশীরভাগই সিট বেল্ট ছাড়া ও হেলমেট ছাড়া গাড়ী ও মটর স্যাইক্যাল চালনায় মৃত্যুকে আলিংগন করে। মটর সাইক্যাল যে চালায়, তার জন্য হেলমেট নিয়ে চালানো খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটা বিষয়। শুধু ডিটারমিনেশন ও বাহ্যিক নিয়মের কড়া চাপই পাড়ে একজনকে হেলমেট পড়াতে। একইভাবে মটর স্যাইক্যালের সহযাত্রী যিনি তিনি আরো বেশী অনিরাপদ। কারণ যিনি চালাচ্ছেন তিনি অনেক কিছু বুঝতে পারলেও পিছনে বসা ব্যক্তিটি নাও বুঝতে পারে। নিরাপত্তার জন্য পিছনের ব্যক্তির জন্য হেলমেট অনেক অনেক জরুরী। ছোট বাচ্চা, যাকে মটর সাইক্যালে বসানো হয়; তার জন্যও প্রয়োজন। অনেকে বছরের পর বছর মটর সাইক্যাল চালাচ্ছেন। অনেক বেশী আত্মবিশ্বাসী। তিনি অল্প দূরত্বের পথটুকু হেলমেট পড়তে চান না। অথচ দু:ঘটনার কোন সময় নেই। যে কোন সময় যে কোন অবস্থায় তা ঘটতে পারে।
সেদিন দেখলাম, আমার ৮ বছরের মেয়ে হাতে গ্লাভস পড়ে মাইক্রোওভেন থেকে খাবার বের করার জন্য বসে আছে। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম; যখন খাবার বের করবে, তখন পড়লেই হত। সে বলল, যদি খাবার বের কারার সময় যদি গ্লাভস পড়তে মনে না থাকে। আর খাবার ওভেন থেকে বের করতে গিয়ে যদি হাতটা পুড়ে যায়। আমি চিন্তা করে দেখলাম; এর মধ্যে যুক্তি আছে। খাবার হয়ে গেল, টুন টুন শব্দ হল; তখন গ্লাভস না পড়েই ওভেন থেকে খাবার বের করে আমরা হাতটা পুড়তে পাড়ি। তাই নিরাপত্তার এই ধারনাটি খারাপ নয়। আমাদের দেশে বেশীরভাগ মহিলারা অ্যাপ্রুন ব্যবহার করে না। তেলে ভাজাভাজি করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করে না। মুখে মাস্ক ব্যবহার করে না। মাথায় নেট ব্যবহার  করে না। শুধু খাবারের হাইজিনই নয়। নিরাপত্তার জন্য গ্লাভস ও অ্যাপ্রুন পড়াটা প্রয়োজন। সচেতনতা অনেক জরুরী বিষয়। দু:ঘটনা ঘটার আগে তা নিরোধ করতে হবে। ঘটে গেলে আর কিছুই করা থাকে না। নিরাপত্তার মানসিকতা একটা শক্তিশালী বিষয়। মানুষের মাঝে নিরাপত্তার সচেতনতা আনতে পারলে মানুষ তাকে নিরাপদ রাখার কৌশল ঠিকই বের করে নিবে।
নির্মানকর্মী কেন হেলমেট পড়বে। এটা বুঝানো জটিল বিষয়। কেন গ্লাভস পড়বে তাও তাকে বুঝানো কঠিন। কারণ এগুলো আরামদায়ক নয়। আমাদের দেশের বেশীর ভাগ নির্মাণ শ্রমিক এগুলো পড়তে চায় না। অথচ দেশের বাইরে গেলে পড়ে। কারণ ওখানে সেফটি গিয়ার না পড়ে কোন দু:ঘটনায় পড়লে বীমা কোম্পানি কোন ক্ষতিপূরণ দিবে না। তাই সবাই সেফটি গিয়ার পরে। কষ্ট বা অস্বস্থি এমন একটা বিষয় মানুষ যথেষ্ট বাধ্য না হলে মানুষ মানতে চায় না। আমার এক আত্মীয়ের কাছে শুনেছিলাম, তার ক্যাবল টিভির ব্যবসা আছে। তার ক্যাবল টিভির এক শ্রমিক বিদ্যুতের পিলারের উপর দিয়ে লাইন নিতে গিয়ে তার ছুড়ে মেরেছে; ইনসুলিন ছাড়া বিদ্যুতের সরবরাহের লাইনের উপর দিয়ে। সেই সরবরাহের লাইনে ডিশের তার আটকিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে ছেলেটা মারা যায়। আমার আত্মীয়টি তার পরিবারের কথা চিন্তা করে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়। আমি আমার আত্মীয়কে বললাম, আপনি একটা ব্যবস্থা এরূপ করতে পারেন; আপনার মাঠের টেকনিশিয়ানরা হেলমেট, গ্লাভস ও বুট পড়ে কাজ করবে। উঁচু জায়গায় উঠলে তাকে হুক ব্যবহার করে আটকিয়ে নিবে। এটা দলিলে লিখয়ে নিতে পারবেন। তাতে আপনার লাভ হবে। আপনার কর্মীদের সেফটি আপনি নিশ্চিত করতে পারবেন। মৃত্যুর মত ভয়াবহ ক্ষতি থেকে বাঁচানো যাবে। আর কর্মী দলিল লেখার কারণে কষ্ট হলেও আপনার সেফটি গিয়ার ব্যবহার করবে।
পরিশেষে বলব, শারীরিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অনেক অনেক রিস্ক বা বিপদ আছে। এটার জন্য সর্বদা প্রস্তুতি লাগবে। সেটা কষ্টকর হলেও তা চালিয়ে যেতে হবে।

No comments:

Post a Comment