Pages

Thursday, October 4, 2018

গৃহস্থলীর ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ক্রয়ের বিপরীতে সেবা ক্রয়


আমি একটা স্বর্ণের দোকানে স্ত্রীর জন্য স্বর্ণ কেনার সময় সেখানকার স্বর্ণকার বললেন; আপনি যে স্বর্ণের জিনিষটি কিনলেন তা যত বছর পরেই হোক কাগজটা নিয়ে আসবেন, আমরা তখনকার দামে ওজন করে ১০% বাদ দিয়ে আপনার কাছ থেকে কিনে নিব। শুনতে খুব ভাল মনে হল। যদিও অত লাভজনক ডিল না। কারণ এখন তিনি নিচ্ছেন আমার কাছ থেকে ২২ ক্যারেট সোনার দাম। আমার থেকে পুনরায় ক্রয় করার সময় তিনি দিবেন অর্ধেক স্বর্ণের দাম যা কিনা তাদের ভাষায় সনাতনী সোনার বা পুরাতন সোনার দাম। যা কিনা প্রায় অর্ধেক দাম। তারপর ১০% বাদ দিবে। অবশ্য ভাল ডিল নয়। তবুও আমরা অনেকেই তাতে সন্তুষ্ট হব। ধরুন আপনি স্বর্ণের ডিজাইন বদল করতে চাচ্ছেন। তখন প্রয়োজনে লস দিয়ে হলেও আপনি নতুন ডিজাইনের সামগ্রী কিনতে পারছেন। মন্দের ভাল।
এখন আপনি ধরুন টিভি কিনেছেন। আপনি চাচ্ছেন পাঁচ বছর পর মডেল চেঞ্জ করতে। এখন আপনাকে প্রায় পানির দামে টিভিটি বিক্রি করতে হবে। তারপর নতুন কিনতে হবে। এখন যদি এমন সিস্টেম থাকে, ধরুন আপনার টিভিটি ১০ বছর ব্যবহার করার পর তা আপনি ২০০০ টাকায় বা সর্বনিন্ম একটা দাম ইচ্ছে করলে যে কোম্পানির কাছ থেকে কিনেছেন তাদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। আর ধরুন আপনি টিভিটি ৫ বছর পর টিভিটি বদল করতে চাইলেন টিভিটির পাঁচ বছর ব্যবহারের জন্য অর্ধেক দাম বাদ দিলেন, যে দাম থাকবে তা নতুন কেনা টিভির সাথে মূল্য অ্যাডজাস্ট করলেন। তাহলে পুরাতন টিভির কি হবে। এটা অর্ধেক দামে রিকন্ডিশান মাল হিসাবে শো রুমে বিক্রি করবে। এই শর্তে যে টিভিটি অবশিষ্ট পাঁচ বছর না চললে হয় ব্যবহারকারী বা ক্রেতা ফেরত দিতে পারবেন বা নতুন বা পুরাতনের সাথে বদল করে নিতে পারবেন। এটা করলে কেমন হয়? আমরা যে কোন ইলেকট্রিক সামগ্রী কিনলে প্রথমে টেনশনে থাকি যে, এই সামগ্রীটি কিনে সেটি নির্ধারিত সময় চালাতে পারব কিনা না। তার আগেই নষ্ট হবে কিনা। কোন জিনিষ কিনলাম কয়েকদিন পর আর ভাল লাগছে না। অথচ এই টিভিটি অন্য কারো জন্য কাজের হতে পারে। একটা কথা প্রচলিত আছে, শো রুম থেকে কোন পণ্য বাইরে বেরুলে তার মূল্য অর্ধেক হয়ে যায়। এই জায়গাটিতে ক্রেতার কোন স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। ক্রেতা সব সময় ভয়ে থাকে আমি ইলেকট্রিক বা ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীটি কিনে বিক্রয়োত্তর সেবা পাব কিনা। বাস্তবতা হল কেউই বিক্রয়োত্তর সেবা পায় না। কারণ শো রুম বা দোকানীরা কোন না কোন বাহানায় ঘুরাতে থাকবে। তার চেয়ে এটা ভাল নয় কি সমস্ত প্রোডাক্টের একটা আয়ু ধরা থাকবে। আবার প্রোডাক্টের একটা সর্বন্নিম দাম ধরা থাকবে। যা কিনা পণ্যটির ভাঙ্গারি দাম বলা যেতে পারে অর্থাৎ এই দামটি ক্রেতা মাল ক্রয়ের অনেক বছর পরও দ্রব্যটি রিকন্ডিশন ফেরত দিলে মূল্যটা ফেরত পাবেন। আপনি ১০ বছর আয়ুর টিভির ১৫ বছর দেখার জন্য দোকানে ফেরত আনলেন। আপনাকে নতুন টিভি দেয়া হল এবং নতুন টিভির মূল্য হতে পুরাতন টিবির সর্বন্নিম দামটি( মনে করি ২০০০ টাকা) বাদ দিয়ে আপনার নতুন টিভির দামটি সাশ্রয় করা হল। আমরা অনেকেই আছি যারা চাই আমাদের পুরাতন সামগ্রীটি সরিয়ে নতুনটি রাখতে। অনেক ক্ষেত্রের পুরাতন সামগ্রীর দাম কেউ বলে না বা বিক্রি করা যায় না। তখন তা ই-বর্জ্য হয় বা কাউকে দান করতে হয়। ভাঙ্গারি হিসাবে অতি নগণ্য মূল্যে ক্রয় করা যাবে।
আমরা টিভি, ফ্রিজ, এসি ও হাউজ হোল্ড সামগ্রী ক্রয় করি। ব্যবহার করি। কিন্তু আমরা সব সময় ভয়ে থাকি আমার কেনা দামী দ্রব্যটি নষ্ট হলে এটি ওয়ারেন্টি হয়ত ঠিকভাবে পাব না। আবার অনেক টাকা খরচ করে নতুন সামগ্রী কিনতে হয়। কষ্টকর অভিঞ্জতা। আমি আপনাদের এতক্ষণ আলোচনা পর নতুন ব্যবসায়িক ধারনা তুলে ধরছি। তা হল একজন ক্রেতা যে কোন সামগ্রী নষ্ট হওয়ায় বা অন্য কোন কারণে ফেরত দিতে চাইলে সে তা ফেরত দিয়ে নতুন আইটেম নিতে পারবে। পুরাতন সামগ্রীর যত বছর ওটার আয়ু অনুযায়ী বকেয়া আছে সেটার বেনিফিট তাকে দেয়া হবে। অনেকে বলবেন, তাহলে ফেরত আসা পুরাতন সামগ্রীতে তো শো রুম ভর্তি হবে তার কি হবে। তবে যথাযথ ভাবে পুরাতন সামগ্রী বিক্রয় করতে পারার একটা কালচার শো রুমে চালু করা সম্ভব।
এভাবে রিপ্লেসমেন্ট সেবা দিয়ে ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর কালচার চালু করলে মানুষ অনেক অনেক উপকার পাবেন। এই বিজনেস মডেলটি অনেকেই চিন্তা করতে পারেন। এই ধরনের বিজনেস মডেল পরিবেশের জন্য অনেক উপকারে আসবে কারণ সমস্ত ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর টেকসই ও সর্বোচ্চ ব্যবহার হবে।

No comments:

Post a Comment