Pages

Wednesday, October 31, 2018

একালের সেনসিটিভ ছেলেমেয়ে

ছোটবেলায় পিতামাতার কাছ থেকে আমরা যা মার খেতাম, এখনকার বাচ্চারা হয়ত তা কল্পনা করতে পারবে না। আমাদের সময় মারধর হত ঘরে ও স্কুলে। পিতা মাতা ও স্কুলের টিচাররা মনে হয় অথরাইজ ছিল মারধর করার জন্য। কারণে অকারণে বেতের বাড়ি ছিল একটা সহজ লভ্য বিষয়। স্কুল কলেজ থেকে বেতের বারি বিতাড়িত হ‌য়ে‌ছে। বেতের বারি ও সাথে অকথ্য বকাঝকা বোনাস থাকত। এখন বেতের বারি নেই। অকথ্য কথা বোনাস হিসাবে পাওয়া যায় না। এখনকার বেশীরভাগ পরিবারের ছেলেমেয়েদের দেখা যায় অনেক বেশী সেনসিটিভ। তারা বকা ঝকা সহ্য কর‌তে পা‌রে না। অল্প‌তেই  তারা ইমোশনাল হ‌য়ে যায়। এই  পৃথিবীর কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু ক‌রে সব ক্ষেত্রেই সহনশীলতা অনেক বেশী জরুরী। সব সময় ভাল ব্যবহার ও যথাযথ মর্যাদা পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষ উন্নতির জন্য ও পেটে খাদ্যের নিশ্চয়তার জন্য ছুটে চলেছে। প্রতিনিয়ত মানুষ যুদ্ধরত। এই  যুদ্ধ চলছে, থামার কোন সু‌যোগ বা লক্ষণ নেই। তাই উঠতি বয়সের বাচ্চা‌দের সহনশীল বানা‌নোটা অতি জরুরী।
আমি এক‌টি ঘটনা শেয়ার করছি। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী একজন ছাত্র প্রিটেস্ট পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল না করার কারণে ক্লাস শিক্ষক পিতাকে ছেলেসহ প্রিন্সিপ্যালের সাথে দেখা করতে বললেন। এ খবর শোনার পর ছাত্রটি আপসেট হয় করে। এর তিন মাস আগে থেকে মাইগ্রেণের সমস্যাটা বেশী ছিল। তখন মাইগ্রেন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। সপ্তাহে সাত দিনের মধ্যে পাঁচদিনই বিছানায় শোয়া। এভাবে দেড় মাস অসুস্থ থাকল, এর মধ্যে চার জন ডাক্তার বদল হয়েছে। কোন সুরাহা হচ্ছে না। মাইগ্রেন বেড়েই যাচ্ছে। চোখের চশমার পাওয়ার ঠিক, এক্সরে করে সাইনাসের কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। সিটি স্ক্যান ব্রেনের করে কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি। মাইগ্রেণের অনেক কারণ অজানা। কারণ পিতাকে নিয়ে প্রিন্সিপ্যালের মুখোমুখি হওয়ার হিমুলিয়েশন সে নিজের অজান্তে হয়তবা আঘাত পেয়ে থাকতে পারে। ফলে মাইগ্রেণের তীব্রতা এরুপ কোন অজানা কারণ থাকতে পারে। মাইগ্রেণের অনেক অনেক কারণ ডাক্তারদের অজানা। ছেলে পরীক্ষায় খারাপ করায় তাকে পেরেন্টসহ প্রিন্সিপ্যাল ডাকবে, এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তা অনেক সেনসিটিভ বাচ্চারা মানসিক ভাবে মুষড়ে যেতে পারে এবং অসুস্থ হতে পারে।
তার মাইগ্রেণের ভয়াবহতায় দেড় মাস চিকিৎসা চলার পর তার সাধারণ পড়া‌শোনার ধারা বদল ক‌রে কম চাপ সৃষ্টি ক‌রে তার উপ‌যোগী বিষ‌য়ে পড়ার ব্যবস্থা করতে হল।
পৃথিবীটা আমরা যেভাবে চাই। সেভাবে পৃথিবীটা পাব না। আমরা যেভাবে চিন্তা করি। পৃথিবীর সব মানুষ সেভাবে চিন্তা করব‌ে না। সকল মানুষের আর্থিক অবস্থা এক রকম নয়। যেহেতু সমতা এক রকম নেই। মানুষের আচরণ এক হবে না। কখনও কর্মক্ষেত্রে  পাওয়া যাবে ভাল বস। কখনও পাওয়া যাবে বুলি বস। সমস্ত ধরনের বস‌দের সাথে কাজ করার প্রশিক্ষণ সেন্টার হ‌তে পা‌রে স্কুল বা কলেজ।
একটা ভাল বিষয় দেখলাম, এখনকার স্কুল গুলিতে ম‌টি‌ভেটর বা কাউন‌সিল‌রের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এটা একটা ভাল ব্যবস্থা। স্কুল‌ের বাচ্চা‌দের সব সময় পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে খাপ খাওয়া‌নো শেখা‌নোটা অনেক বেশী প্র‌য়োজনীয়। তা‌দেরকে পৃথিবীর বাস্তবতা ‌শেখা‌নোটা অনেক জরুরী। পৃথিবীর সকল মানুষ কখ‌নো ভাল করা সম্ভব নয়। উন্নত পড়া‌শোনা। উন্নত জীবন বিধান দ্বারা মানুষের অপরাধ কমা‌নো ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু অপরাধ নির্মূল করা যাবে না। অপরাধ নির্মূল করার জন্য পারিবারিক শিক্ষা ও মূল্য‌বো‌ধের বিকাশ অনেক বেশী প্র‌য়োজন। পিতামাতা‌কে সন্তান গ্রো‌মিং করার শিক্ষাটা গ্রহণ করার প্র‌য়োজন। স্কুল ও কলেজের শিক্ষক‌দের প্র‌য়োজন জীবনযাপন বিষ‌য়ে ম‌টি‌ভেশন করা। কিভাবে বিরূপ অবস্থা মোকা‌বেলা কর‌তে হবে তার উপর মনস্তাত্ত্বিক ট্রেনিং দি‌তে হবে। কিভাবে কারো টিজিং, এবিউজ ব্যবহার ও বুলি মোকা‌বিলা কর‌তে হবে তার ট্রেনিং এখনকার ছেলেমেয়েদের জন্য প্র‌য়োজনই নয়, অত্যাবশ্যকীয় বটে। পরিশেষে বলা যায়, ছেলেমেয়েদের পিতামাতা‌কে ডে‌কে হেনস্তা করা অপেক্ষা ম‌টি‌ভেটর বা কাউন‌সিলা‌রের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীর সাথে কথা বলে অতঃপর পিতামাতা‌কে ডাকাটা উত্তম। হুট ক‌রে পিতামাতা‌কে জবাবদী‌হিতা করার জন্য ডাকাটা ছেলেমেয়েদের নার্ভাস সিস্টেম ব্রেক কর‌তে পা‌রে।

No comments:

Post a Comment