Pages

Friday, November 16, 2018

বর্তমান দামী খাবার


ছোট‌বেলা দেখতাম বাবার কাছে গ্রামের অভাব ও অনটনে পড়া কেউ কেউ পড়া‌শোনার জন্য আর্থিক সাহায্য চাইতে আসত। তাদের অনেকে সন্তান নি‌য়ে বলত, সন্তান অনেক পড়া‌শোনা ক‌রে সেই  অনুযায়ী মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ খাওয়া‌তে পা‌রে না। কলের বিবর্তনে আজ আমরা এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছি। আজ পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া ঘরে ঘ‌রে খায়। ডিম অনেক অনেক উৎপাদন হয়। কোন পরিবারের বাচ্চারা ডিম ভাগ ক‌রে খায় জানা নেই। বয়লার মুরগীর ব‌দৌল‌তে মাংসের ঘাটতি নেই। দুধ উৎপাদন বাড়ছে। হয়ত দুধ তেমন না পেলেও দুগ্ধজাত পণ্যের অভাব নেই।
বিপদ হল ভাজা পোড়া ও মিষ্টি আইটেমে বাজার সয়লাব। তাই কোন দরিদ্র পিতামাতাও বাচ্চা‌দের মুরগী, মাছ ও ডিম থেকে বঞ্চিত করছে না। রাস্তা ঘাটে অধিক ওজনকারী বাচ্চার সংখ্যা বাড়ছে। খাবারের দাম কমেছে। উচ্চ ক্যালরির খাবার এখন অনেক সস্তায় পাওয়া যায়। আপনি ধরুন পাঁচটি  গরম ভাজা পুরি খেয়ে ফেললেন। পাঁচটি গরম গরম জিলাপি খেয়ে ফেললেন, কি পরিমাণ ক্যালরি নি‌য়ে ফেললেন, ডাই‌টে‌শিয়ানরা হিসাব ক‌রে হয়রান হ‌য়ে যাবে। আপনি বিশ টাকায় দু‌টি বড় বড় সাগর কলা খেয়ে ফেললেন। কম পরিশ্রমী মানুষ সারাদিনের অর্ধেক ক্যালরি ওই দুইটি কলায়ই পেয়ে যাবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রচারণার যুগে হাই ক্যালরি ফুল আর হাই ক্যালরি ফ্যাটযুক্ত খাবার আজ দামী হলেও শিক্ষিত ধনী‌দের কাছে পরিত্যাজ্য আজ ধনীরা খুঁজে লো ফ্যাট ও‌ লো ক্যালরি ফুড। তারা জানে এসি গাড়ী, এসি বাড়ী ও কায়িক প‌রিশ্রমবিহীন জীবন তা‌দের হাই ক্যালরি ফুড ও হাই ফ্যাট ফুড তাদের জীবন সংকীর্ণ ক‌রে দিবে। তাই পেট ভরবে গা‌য়ে কম লাগবে সেই  খাবারগু‌লি ধনীরা খোজ করেন। একটা হাই ক্যালরি কলা খাওয়ার চে‌য়ে এক কেজি ড্রাগন ফল খাওয়াটা ধনী‌দের কাছে বেশী আগ্রহের। অথচ একটা কলার দাম দশ টাকা আর এক কেজি ড্রাগন ফলের দাম ৫০০/৬০০ টাকা। এক কেজি আলু অনেক ক্যালরি দিবে দাম  ২০ টাকা। অপরদিকে এক কেজি মাশরুম অনেক পুষ্টি দিবে দাম ১০০০ টাকা। তাই পুষ্টি আগে ক্যালরি পরে। মোটা ঠেকা‌নোটা মূল ব্যাপার। আজ মজাদার খাবার কায়িক পরিশ্রমকারী দরিদ্রের দখলে। পানসে, তৈল কম, চিনি কম ও লবণ কম খাবার ধনীর ভাগ্যে। আজ কোন দরিদ্র বলবে না যে, টাকা নাই। ছেলে মেয়েকে ডিম দুধ খাওয়া‌তে পারিনা।
খাদ্যের চাহিদার এই ধরনের পরিবর্তনে অবাক হতে হয়। হয়তবা ২০/২৫ বছর আগে ঘি ভাজা প‌রোটা ও ঘির তৈরি নানা আইটেম ছাড়া ধনীর ব্রেক ফাস্ট কল্পনা করা যেত না। আজ ধনীর প্লেটে ওরস, কন‌ফ্লে‌ক্সের মত ফাইবার রিচ খাবার। ধনীর ডাই‌টে‌শিয়ানরা হয়রান হ‌য়ে যায়, লো ফ্যাট ও লো ক্যালরি খাবার বের কর‌ার জন্য। লো ফ্যাট ও লো ক্যালরি খাবার আজ অনেক অনেক বেশী চাহিদা সম্পন্ন ও দামী।
তিন তারা ও পাঁচ তারা হো‌টেলগু‌লো মাশরুম, ক্যাপ‌সি কাম, বেবি কর্ণ ইত্যাদি ছাড়া কারী কল্পনা কর‌তে পা‌রে না। অথচ খাবার গুলি উচ্চ ক্যালরি বা উচ্চ ফ্যাট-যুক্ত নয়। অপরদিকে উচ্চমূল্যের অলিভওয়েল দি‌য়ে সমস্ত রান্না ক‌রে দিবে। বিল যদিও আকাশচূম্ভী। তবুও ধনীর জন্য কুছপ‌রোয়া নেহি। ভারী শরীর ও ক্ষতিকারক ‌রোগ থেকে বাচাটা জরুরী। ধনী‌দের ডাই‌টে‌শিয়ানরা না হয় বেঁছে বেঁছে উচ্চমূল্যে পুষ্টিকর খাবার বের ক‌রে দিচ্ছে বা অনুপ্রাণিত করছে। কিন্তু মধ্যম আ‌য়ের দোকানদা‌রের কি হবে। দিনের বেশীরভাগ সময় কায়িক পরিশ্রম কম ক‌রে দোকানদারী করছেন। তিনি হয়তবা ধনী‌দের মত দামী মেনু‌তে যাচ্ছ‌েন না। তিনি খাচ্ছেন পেঁয়াজু, লুচি ও জিলাপির মত মূখ‌রোচক খাবার। এই  খাবারগু‌লো দাম কম ও ওজন বাড়ায়। তবে কায়িক পরিশ্রমীরা এরুপ খাবার বেশী খেলেও পরিশ্রম ক‌রে তা ঝাড়িয়ে ফেলে। গা‌য়ে রাখ‌তে দেয় না।
বর্তমানকালে পুষ্টিকর খাবার দামী ও কমদামী দু‌টোই আছে। খাবার বাছাই কর‌তে হবে লাইফ স্টাইল ও পরিশ্রমের প্যাটার্ন অনুযায়ী। আজকাল মা‌য়েরা বাচ্চা‌দের বাটার, চিজ ও ভাজা পোড়া অনেক আইটেম খাওয়ায়। কিন্তু বেশীর ভাগই মায়েরা বাচ্চা‌রা কতটুকু পরিশ্রম করছে তার উপর মেনুটা নির্ধারণ করেন না। যা অতি জরুরী। নতুবা বাচ্চারাও ধী‌রে ধী‌রে মোটা হ‌য়ে অকেজো হ‌তে থাকবে। সাধারণ ও মধ্যবিত্ত পরিবারেও হাই ফ্যাট ও হাই ক্যালরি খাবার অধিক গ্রহনের ফলে সাধারন পরিবারেও মোটা মানুষের সঙখ্যা বাড়ছে। তাই অল্প পরিশ্রমী মানুষের উচ্চ ফ্যাট ও উচ্চ ক্যালরির খাবার পরিহার করাটা অতি জরুরি। হয়ত ধীরে ধীরে মানুষ সচেতন হবে ও সমাজে পরিবর্তন আসবে।


No comments:

Post a Comment