আমি আমার নিকটাত্মীয়কে একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করিয়েছিলাম।
স্বাভাবিক কারণে আত্মীয়াকে দেখা ও সেবা করার জন্য নিয়মিত ক্লিনিকটিতে যেতে
থাকলাম। মাঝে মাঝে ঔষধ কেনা ও এটা ওটার ব্যবস্থা করার মত খুচরো কাজ করে সহায়তা
করলাম। ক্লিনিকটি জেলা শহরের প্রায় ২০/২২ বছর পুরানো। আমার সরকারী চিকিৎসার সুযোগ
থাকায় আমি ক্লিনিকের পদ্ধতির সাথে পরিচিত নই। অনেক ক্লিনিক আছে ওয়ান স্টপ সেন্টার
টাইপ। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আপনাকে ঘাটে ঘাটে ঘুরতে হয় এখানে সবকিছু
অটোমেটিক। প্রথমত কোন রোগী আসার সাথে সাথে স্ট্রেচার বা হুইল চেয়ারে করে রোগীকে
ডাক্তারের কাছে নেয়া এবং ক্লিনিকের ওয়ার্ডে নেয়ার জন্য কিছু ইয়ং ছেলেদের ক্লিনিকরে
দরজায় থাকবে। রোগী আসার সাথে সাথে তারা তাড়াহুড়ো করে রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে
যাবে। তারপর ডাক্তারের কাছ থেকে ক্লিনিকের বেডে বা কেবিনে নিয়ে যাবে। প্রথম দেখায়
আপনি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করবেন। কিছুক্ষণ পর আপনার ভুল ভাঙবে
যখন আপনার কাছে স্ট্রেচারে রোগী উঠানো ও নামানো বাবত ৫০০/১০০০ টাকা দাবী করে বসবে।
আপনার কাছে অযৌক্তিক মনে হলেও আপনাকে মানতে হবে। কারণ আপনার রুগীকে উঠানামা করিয়েছে। অনেকটা নতুন জামাইয়ের হাত ধোয়ানোর মত। আপনি না চাইলেও আপনাকে হাত
ধোয়ানো হবে বা টাকা নেয়া হবে। আপনি ধরে ধরে রোগীকে তুলতে পারলেও তাকে হুইল চেয়ারে বসানো হবে বা স্ট্রেচারে করে আনা হবে এবং আপনার কাছে বিল দাবী
করা হবে। যেটার সাথে ক্লিনিকের বিল জড়িত নয়। এমনকি অনেক ক্লিনিকের চাকুরীরত লোকদের
বাইরে ক্লিনিককে উল্টো চাঁদা দিয়ে ওরা রোগী উঠানো নামানোর কাজ করে থাকে। অথচ এটা
ক্লিনিকের সেবার আবশ্যক অংশ হতে পারত। তা না হয়ে রোগীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের একটা
মাধ্যম বলা যায়। অনেক ধনীরা হাসিমুখে টাকাটা দেন। অনেক সাধারণ মানুষের কাছে এটা
চাপ মনে হবে।
এরপর
আসা যাক ক্লিনিকের রুম ঝাড়ু দেয়া বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা। অনেক ক্লিনিক আছে কোন
ঝাড়ুদার রাখে না। রোগীরা চাইলে তাড়া আসে ঝাড়ু দেয়। রোগীরা পয়সা দেয়। চুক্তিভিত্তিক
রোগীর সাথে পেমেন্টে কাজ। রোগী সামর্থ্যবান হলে সেবা পাবে অন্যথায় রোগীর
বন্দোবস্ত। তবে প্রায় সকল ক্লিনিকের কয়েকজন স্থায়ী ক্লিনার থাকে। তারা সামগ্রিক
ভাবে কেবিনের বাইরের ক্লিনিকে কাজ করে। অনেক ক্লিনিকে আছে রোগী ছাড়ায়ে নেয়ার সময়
ক্লিনিকের সমস্ত ক্লিনারকে মোটা অংকের একটা টাকা তারা এক সাথে দাবী করে ও রোগীকে
তা দিতে হয়। আবার নার্স ও অন্যান্য স্টাফরাও রোগীর কাছ থেকে টাকা আদায় করে। বিশেষ
করে বাচ্চা হওয়া মায়েদের জন্য জনে জনে মিষ্টি খাওয়ানোর একটা রেওয়াজ তারা রেখেছে।
এই মিষ্টির খরচটা আবার টাকায় দিতে হয় কষ্ট করে মিষ্টি কেনার প্রয়োজন নেই।
দেশের
সমস্ত ক্লিনিক বিশাল বিশাল বিল ধরিয়ে রোগীর গলা কাটছে তারপর যোগ হয় স্ট্রেচার
বেয়ারার বিল ও অন্যান্য ব্যক্তি বিশেষের বিল। এটা থেকে মুক্তির উপায় হয়ত কোন একদিন
ডাক্তাররা বা হাসপাতাল পরিচালকরা বের করতে পারবে।
ক্লিনিকগুলির
নীচে ঔষধের দোকান থাকে। এরা ঔষধের দাম বেশী নেয়, এতে
সন্দেহ নেই। তবে ভাল বিষয় হল, রিক্সা ভাড়া বা গাড়ী ভাড়া করে
দূরে যেতে হচ্ছে না। এটা খারাপ বিষয় নয়। বিপত্তিটা হয় তখনই যখন এরা বড়াবাড়ি রকম
বেশী দাম নেয়।
প্রাইভেট
ক্লিনিক সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনেক সীমাবদ্ধতাকে দূর করেছে। এটা সঠিক।
অস্থায়ী শ্রমিক ও দালাল ইত্যাদি শ্রেণী তৈরি করছে। যা ভাল লক্ষণ নয়। চিকিৎসার
সেবাগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে যত সুসংহত করা যাবে, সাধারণ মানুষ
তত উপকৃত হবে। প্রতিটি ক্লিনিকে অনেক মানুষ আসে, তাদের
সুচিকিৎসা প্রয়োজন। তবে কোন ক্লিনিক সমাজের জন্য খারাপ থেকে ভালটাই বেশী করে।
তাই ক্লিনিক বন্ধ না করে নিয়ন্ত্রণ জরুরী। প্রথম নিয়ন্ত্রণ; রোগী উঠানো নামানো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ক্লিনিকের বিলের অংশ বা
ক্লিনিকের সেবার অংশ হওয়া প্রয়োজন। বাচ্চা হলে মিষ্টি খাওয়ানোর প্রাকটিস
ক্লিনিকে না থাকাই ভাল। যদি এগুলো বন্ধ করা না যায়, তাহলে
রেগুলেট করতে হবে। রোগীকে উঠানো নামানোর খরচ ঝুলিয়ে দেয়া যেতে পারে।
রোগীর কেবিন প্রতিবার পরিষ্কারের জন্য নিদিষ্ট
বিল নির্ধারণ করা যেতে পারে। ক্লিনিকের মেডিসিন কত শতাংশ বেশী দাম রাখবে তাও
রোগীকে অবগত করতে পারে। এতে রোগীর অ্যাটেডেন্টরা ঔষধের দামের স্বচ্ছ
ধারনা পাবে ও প্রয়োজনে অর্থ সাশ্রয়ের জন্য তারা বাইরের ফার্মেসি থেকে ক্রয় করতে
পারবে। তাই ক্লিনিকের আওতাধীন ফার্মেসীগুলোতে নিয়ন্ত্রন প্রয়োজন। ক্লিনিক
সমাজের অনেক উপকার করছে। কর্মসংস্থান করছে। তাই ক্লিনিকগুলো মান নিয়ন্ত্রন করে
জনসেবার বাড়ানোর ব্যবস্থা করাটা অতি জরুরী।
No comments:
Post a Comment