Pages

Thursday, October 15, 2015

বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইট ও সহজ তথ্য প্রবাহ

আমার পৈত্রিক বাড়ী গ্রামে তদুপরি আমার পিতার সরকারী চাকুরীর অবসর কালীন সময়টা গ্রামে কাটানোর কারণে আমাকে গ্রামে যেতে হয়। গ্রামে যাওয়ার কারণে ইউনিয়ন পরিষদের ইনফরমেশন সেন্টার দেখার সৌভাগ্য হয়। এগুলো সত্যিকার অর্থে খুবই উপকারী। আর আমি আইটি কার্যাবলী  পছন্দ করায় এগুলো আমার মাঝে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি করছিল। বিভিন্ন সময়ে আমি সরকারী বিভিন্ন ওয়েব সাইটগুলি দেখি। দিনকে দিন সাইটগুলো বেশ তথ্যবহুল হচ্ছে এটা সত্যিই অত্যন্ত ভাল দিক।তথ্য অনুসন্ধানে কিভাবে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইট গুলো কাজে লাগতে পারে তার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি।
          পত্রিকায় একটা খবর পড়লাম নওগাঁতে এক লোক ভিয়েতনামী কই মাছ চাষ করে সফলতা অর্জন করেছে। মাছ চাষির গ্রামের নাম ও ইউনিয়নের নাম পত্রিকায় দেয়া ছিল। আমি মাছ চাষির পুরো নাম, গ্রামের নাম ও ইউনিয়নের নাম দিয়ে আমার একজন অভিজ্ঞ জেসিও(জুনিয়ার কর্মকর্তা)কে বললাম, পত্রিকায় উল্লেখিত মাছ চাষির  মোবাইল নম্বর যোগাড় করুন। আমি তার সাথে কথা বলব। এর তথ্য নিয়ে আমাদের একটা পুকুরে ভিয়েতনামী কৈএর চাষ করব। কয়েক ঘণ্টা ঘুরে এসে বলল, স্যার, এই এলাকায় কোন সৈনিক পাইনি। তবে পাশের ইউনিয়নের সৈনিক পাওয়া গেছে। তাকে ছুটি পাঠিয়ে দেই। আগামী কাল সব তথ্য নিয়ে হাজির হবে। আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম, আমি আপনাকে তথ্য আনার জন্য কাউকে ছুটি পাঠাতে বলিনি। আমি মোবাইল নম্বর চেয়েছি। তিনি অবাক হয়ে বললেন, কাউকে ছুটি না পাঠালে তথ্য জানব কিভাবে। আমাদের পিএবিএক্সের এক্সচেঞ্জ অপারেটরকে বলুন নম্বর যোগাড় করতে। সে জানাল, পিএবিএক্সের এক্সচেঞ্জের অপারেটর কোন বুদ্ধি বের করতে না পেরে লোক পাঠানোর বুদ্ধি দিয়েছে। আমি তাকে জানালাম, আপনার এক্সচেঞ্জের অপারেটর ওই উপজেলার বিটিসিএলএর এক্সচেঞ্জের অপারেটরের সাথে কথা বলে চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বর নিতে পারত। আর আপনি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিতে পারতেন, সেই মাছ চাষির মোবাইল নম্বর যোগাড় করতে। তাহলেই তো কাজ হত। আমি মোবাইলের ব্রাউজারে গুগগুল সার্চ এনে ইউনিয়নের নাম দিয়ে সার্চ দিলাম। ইউনিয়নের নামটা দিয়ে সার্চ করে আমি সেই ইউনিয়নের ওয়েব সাইটে গিয়ে চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বর পেয়ে গেলাম। আমার সেই জেসিওকে চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বরটি দিয়ে বললাম, এখন চেয়ারম্যানকে বলেন, সেই মাছ চাষির নম্বর যোগাড় করতে। সৌভাগ্য বশত সেই মাছ চাষির মোবাইল নম্বর চেয়ারম্যানের কাছে ছিল। চেয়ারম্যান মাছ চাষির নম্বর সাথে সাথে দিতে পারল। আমি জেসিওকে বললাম এখন আর বোধ হয় কাউকে তথ্য আনার জন্য ছুটি পাঠানোর দরকার নাই।
 ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটে চেয়ারম্যান সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর আছে। তাই কোন ব্যক্তির নাম, গ্রামের নাম ও ইউনিয়নের নাম জানলে ব্যক্তি বিশেষের তথ্য সহজেই বের করা যায়। গ্রাম পুলিশের নম্বরও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে দেয়া থাকে। তাদের কাছ থেকে বা চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে গ্রামের মেম্বারদের মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। আর মেম্বারদের মাধ্যমে গ্রামের যে কোন লোকের মোবাইল যোগাযোগ বা তথ্য জানা সহজ।
একবার একজন মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারীর বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইট আমার কাজে লেগেছিল। এক ব্যক্তি একজন মুক্তিযোদ্ধার  একমাত্র উত্তরাধিকারী পরিচয় দিয়ে অনুদানে অর্থ গ্রহণ করার জন্য আসে। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আমার সন্দেহ হয়। তাকে সামনে বসিয়ে রেখেই আমি এই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইট থেকে চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বর বের করি। তখন চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে জানতে পারি উল্লেখিত মুক্তিযোদ্ধার আরো উত্তরাধিকারী আছে। এভাবে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইট অনেক তথ্য প্রাপ্তিতে সহায়তা দিতে পারে।
          আমাদের অনেক সময় কাজের লোক, দারোয়ান, ড্রাইভার ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নানা কর্মীদের তথ্য জানা বা ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয়। সরকারী প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রাপ্তদের সাধারণত পুলিশের মাধ্যমে ভেরিফাই করা যায়। ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রাপ্ত লোকদের গ্রামের বাড়ী বা আইডি কার্ডের তথ্যকে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রাম পুলিশ ইত্যাদির দ্বারা সত্যতা প্রতিপাদন করা সম্ভব। সাধারণত কোন ব্যক্তির বিষয়ে গ্রামে আপনি কোন ব্যক্তি বিশেষের কাছে জানতে চাইলে সহজেই অনেক তথ্য পাবেন। গ্রামের লোকজন শহর অপেক্ষা প্রতিবেশীদের অধিক হারে চেনে।
          ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটের যে ব্যবহার আমি বললাম আসলে তা একমাত্র বা গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যবহার নয়। ইউনিয়ন পরিষদের সকল ওয়েব সাইট হয়ত যথাযথ তথ্যাদি দিয়ে তথ্য সমৃদ্ধ নয়। তবু সাধারণত অনেক মোবাইল নম্বর দেয়া থাকে। তা বেশ উপকারী। অনেক ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটে সকল স্কুল কলেজের প্রধানদের কন্ট্রাক্ট নম্বর আছে। আমি কয়েকটিতে আবার মুক্তিযোদ্ধাদের মোবাইল নম্বরসহ তালিকা দেখেছি। এমনকি ভিজিএফ কার্ড ও অন্যান্য সুবিধাভোগীদেরও তালিকাও অনেক চেয়ারম্যান রেখে দিয়েছে। অনেক ওয়েব সাইটে চেয়ারম্যানের বিভিন্ন নোটিশ বিঞ্জপ্তি দেয়া হয়। যা জনসাধারণের কাজে দেয়। আবার অনেক ওয়েবসাইটে প্রবাসীদের তালিকাও আছে। গ্রামের নাম, জনসংখ্যা, ম্যাপ ইত্যাদি অনেক তথ্যই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইট গুলি ইনফরমেশন সেন্টারের কর্মীরা মূলত যে যে ইনফরমেশন প্রয়োজন মনে করে তা দিয়ে চেয়ারম্যানদের মতামত অনুযায়ী তথ্য রাখে। যদিও ওয়েব সাইটগুলির তথ্যের হেডিংগুলো অনেকটাই নিদ্দিষ্ট করে দেয়া আছে। যেমনআমার  ইউনিয়ন হল কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের ওয়েব এড্রেস হল: http://shashidalup.comilla.gov.bd

আমরা সকলে আশা করতে পারি, আমাদের সকল গ্রামের তথ্য আমরা ইন্টারনেটে পেয়ে যাব। যেমন, ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইট থেকে আমার গ্রাম দেউসের জনসংখ্যার তথ্য পেলাম। আমার গ্রামের জনসংখ্যা হল ১৬৮২ জন। এভাবে প্রতিনিয়ত মেম্বাররা গ্রামগুলোর হালনাগাদ পরিসংখ্যান রাখতে পারে। এতে আদমশুমারি ছাড়াও প্রতিটি গ্রামের জনসংখ্যার তথ্য ও অন্যান্য তথ্য হালনাগাদ পাওয়া যাবে। এমন একদিন আসবে যখন আমরা ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইট থেকে প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি বাড়ীর জ্যৈষ্ঠ সদস্যদের নাম পাব। কন্ট্রাক্ট নম্বরও পাব। এভাবে হয়ত একদিন গোটা বাংলাদেশের সকল তথ্য হাতের মুঠোয় চলে আসবে। তখন সার্থক হবে ইউনিয়ন পরিষদের ইনফরমেশন সেন্টার গুলো।

No comments:

Post a Comment