Pages

Thursday, October 1, 2015

মোবাইল ফোনের একাধিক সিম ও জটিল যোগাযোগ

আমার মত অনেকেই নিশ্চয়ই হয়রান আত্মীয় স্বজনদের মোবাইল নিয়ে। প্রায় সকলেরই বর্তমানে একাধিক নম্বর আছে। কোনটি চালু আছে কোনটি চালু নেই। দেখা যাচ্ছে প্রত্যেকের একাধিক নম্বর থাকলে আর এক মোবাইলে একাধিক সিম থাকলে একটি নম্বরে কথা বললে অন্য নম্বরগুলি আর সংযোগ দেখায় না। আবার চাকুরীজীবিদের সরকারী ফোন থাকলে একাধিক মোবাইল বহন করতে হয়। অফিসের মোবাইল সাথে রেখে ব্যক্তিগত মোবাইল বাসায় ফেলে রেখে গেলে আত্মীয় স্বজন আর পায় না। মোবাইলের জটিল চক্করে জীবন হয়রান। আবার অনেকে এত বেশী ফোন পায় তারা মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখে। তখন আবার আরেক চক্কর। তাদের পেতে আবার অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। কারণ সাইলেন্ট পার্টি মাঝে মাঝে মোবাইল চেক করে এবং তাদের সুবিধাজনক সময়ে কল ব্যাক দেয়।
আমার একজন সহকর্মী ছিল সে অপারেশন অফিসারের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ছিল। তাকে সাধারণত আমরা একবারে পেতাম না। কারণ সে সর্বদা মোবাইল  সাইলেন্ট করে রাখত তার কাছে আমি জানতে চাইলাম সব সময় মোবাইল সাইলেন্ট করার কারণ কি? তার একটাই উত্তর তার সাধারণত ব্লাড প্রেশার হাই থাকে। হটাত মোবাইল বেজে উঠলে তার বুকে ধুক ধুঁকনি বেড়ে যায়। এর রিমেডি বের করাটা সত্যিই বড়ই জটিল। আমি আবার আলোচনা সভা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা ও এবাদতের সময় মোবাইল সাইলেন্ট করে বিপদে পড়ে যাই। কারণ প্রায় ভুলে যাই যে মোবাইল সাইলেন্ট আছে। এরপর আমার উপরের কর্মকর্তারা মোবাইল সাইলেন্ট না করার পরামর্শ দিলেন। আলোচনা সভা ও সিনিয়রদের সাথে কথোপকথনে সহকারী কাউকে মোবাইলটা দিয়ে রাখা যেতে পারে। এমনকি এবাদত কালীন সময়ে মোবাইল বাসায় রেখে মসজিদে যাওয়া যেতে পারে অথবা মসজিদের বাইরে কেউ থাকলে তাকে দেয়া যেতে পারে। এ সমাধানগুলো আমার জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে।
আগে আমরা চিঠি লিখতাম চিঠির উত্তর পেতে অনেক দিন অপেক্ষা করতাম। তারপর কুরিয়ার এলো আমরা এক/দুই দিন অপেক্ষা করে উত্তর পেয়ে যেতাম। একসময় মোবাইল ও এসএমএস আসল। আমরা আরো দ্রুত যোগাযোগ করতে পারলাম। আমাদের যোগাযোগের ধৈর্য অনেক কমে গেল। এখন আমরা কাউকে মোবাইলে না পেলে খুবই বিরক্ত হই। আর সেই সাথে একাধিক নম্বর থাকলে একটার পর আরেকটা চেষ্টা করার আরেক প্রয়াস চলতে থাকে। অতঃপর একান্তই না পাওয়া গেলে এসএমএস দিয়ে আমরা সাধারণত ক্ষান্ত দেই। আগে ল্যান্ড ফোনে ব্ল্যাংক কলের একটা ঝামেলা ছিল। কোন বাসায় উঠতি বয়সী মেয়ে থাকলেই হল। সাধারণত কলার আইডি আসত না বলে কে কল করেছে তা বুঝা যেত না। অনেক সময় কাঠ খড় পুরিয়ে অনেক খরচ করে টিএন্ডটি থেকে ডিস্টার্ব করীর নম্বর সংগ্রহ করা যেত। এখন অহরহ অনেক নম্বর থেকে মোবাইল ডিস্টার্ব আসে। এদের ধরতে প্রাযুক্তিক ভাবে সহজ হলেই তা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। একাধিক ও সহজলভ্য হওয়ায় মোবাইলে ডিস্টার্ব করে সহজেই সিম চেঞ্জ করে নিয়ে নিরাপদ থাকে ডিসটার্বকারী লোকজন। অনেক সময় হোয়াইট লিস্ট বা ব্ল্যাক লিস্ট চালু করে সাময়িক ভাবে মোবাইল বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সিম চেঞ্জ করে ডিস্টার্ব থেকে বাচা যায়। সিম চেঞ্জ করলে সাধারণত দুটি ক্ষতি হয়। এক পরিচিত সবাইকে আবার নতুন নম্বর জানাতে হয়। আর্থিক ভাবে নতুন সিমটা কেনার বাড়তি খরচ করতে হয়। প্রায়শই দেখা যায় কারো সিম হারিয়ে গেলে সিমের দাম তেমন বেশী না হলেই টাকা খরচ করে পুরাতন সিম নিতে দেখা যায়। কারণ একটা নম্বর সর্বদা ব্যবহার করাটা অত্যন্ত ভাল । কারণ, এতে আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এক সময় আমি বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির বিভিন্ন অফারে আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির একাধিক নম্বর নেই। পরে দেখলাম এটা একটা বিড়ম্বনা। আমি একটা সান্ত্বনা বের করলাম। আর তা হল, দেশে টাকা দেশে রাখার কনসেপ্ট। আমি টেলিটক সিমকে আমার স্থায়ী সিম করে ফেললাম দেশের টাকা দেশে রাখার জন্য। দেশী সিম টেলিটকে বেশী টাকা খরচ করলেও আশা করা যায় সমুদয় টাকা দেশে থাকবে। অন্যান্য সিমে ১৫% দেশে থাকলেও অন্যান্য সকল লভ্যাংশ দেশের বাইরে চলে যায়। এ চিন্তায় আমার  টেলিটক সিমটি সর্বদা ব্যবহারের জন্য স্থায়ী হয়ে থাকল। টেলিটকের নেটওয়ার্ক দুর্বলতার জন্য অন্য কোম্পানির সিমও রাখার প্রয়োজন পরে। এ কারণে টেলিটকের বাইরে দুই একটি সিম না রেখে আর পারিনি।
সকল মোবাই‌ল কোম্পানীর একই ব্যক্তির মোবাইল ব্যক্তি চাহিদার  উপর নির্ভর করে মোবাইল কোম্পানীর কোড ব্যতীত নম্বরের অন্যান্য ডিজিটের নম্বর এক হ‌তে পারে। যেমন আমার টেলিটকে নম্বর হল ০১৫৫৮৭৩৭৩৫৫, গ্রামীণ ফোনে নম্বর‌টি হ‌তে পা‌রে  ০১৭৫৮৭৩৭৩৫৫ , বাঙলা লিংকে হ‌তে পা‌রে ০১৯৫৮৭৩৮৩৫৫, ভারতে এধরনের ব্যবস্থা আছে বলে জানা যায়। আমা‌দের দেশের অনেকে  মনে হয়  এয়ারটেল মোবাইল কোম্পানী থেকে নম্বর মিলিয়ে নম্বর নিতে পারেন। সভা সমিতি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ইভেন্ট ম্যানেজারের কাছাকাছি একজন দুইজন থাকবে সভার সকলের মোবাইলগুলো একসাথে রেখে মনিটর করতে পারেন। এতে আগত কলারকে জানাতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ সভা চলছে। ধর্মীয় উপাসনালয়ের সামনে অনেকসময় দ্রব্যাদি বা জুতা ইত্যাদি ম্যানেজ করার জন্য লোক মজুদ থাকে। তেমনি মোবাইল ফোনও একই ব্যবস্থায় থাক‌তে পা‌রে। যেখানে  মোবাইল ফোনগুলি  কিছু সংখ্যক মানুষ ভাড়ার বিনিময়ে সংরক্ষণ করবে ও প্রয়োজনে উত্তর দিয়ে জানাবে পড়ে কল করুন। কারণ তিনি এখন এবাদতে ব্যস্ত।
মোবাইলের  বিভিন্ন কোম্পানীর আলাদা আলাদা টাওয়ার বা বিটিএস না থেকে সবাই একই  টাওয়ার ব্যবহার করলে মোবাইল কোম্পানীর খরচ কম লাগত। নেটওয়ার্কের মানও ভাল হত। অনেক দেশে জানা যায় টাওয়ার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের আলাদা কোম্পানী কর্তৃক করা হয়। এতে মোবাইল কোম্পানীর পরিচালন ব্যয় কমবে। মোবাইলের   কল চার্জ কমবে । অপর দিকে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। জমি  ও জায়গার অযাচিত ব্যবহার কমবে। বাংলাদেশের মত  ছোট দেশের জন্য জমি ও বিদ্যুৎ এর এ ধরনের অপচয় কমা‌নো যে‌তে  পারে। ইদানীং  বাংলাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার টানার জন্য আলাদা কোম্পানি হয়েছে। অন্যথায় সমস্ত মোবাইল কোম্পানী আলাদা আলাদা লাইন টানলে দেশ ব্যাপী খোড়াখু‌ড়ি আর অপটিক্যাল লাইনে  একাকার হ‌য়ে যেত। তাই নির্ধারিত কোম্পানীর দ্বারা অপটিক্যাল ফাইবার রক্ষণাবেক্ষণ হওয়ায় এ খাতে শৃঙ্খলা এসেছে। এখন মোবাইল টাওয়ার ও বি‌টিএস নিন্মা‌নে শৃঙ্খলা আস‌বে বলে মনে করা যায়।
মোবাইল নেটওয়ার্ক ও টেলিযোগাযোগ খাতে নিন্মবর্নিত উন্নয়নগুলো হতে পারে:
১. সকল মোবাইল কোম্পানি একই বিটিএস টাওয়ার ও অপটিক্যাল লাইন ব্যবহার করলে সকল মোবাইল কোম্পানির খরচ কমবে লাভ বাড়বে । আর গ্রাহকের সবচেয়ে বড় লাভ হল মোবাইল বিল কমে আসবে।
২. যে কোন গ্রাহক যে কোন মোবাইল কোম্পানির মোবাইল ক্রয় করলে সে নম্বরটি  অন্যান্য সকল মোবাইল অপারেটরের জন্য বরাদ্ধ হতে হবে যেন একই গ্রাহক অন্য কোম্পানির মোবাইল ক্রয় করলে নতুনভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে না হয়। এতে গ্রাহক বিভিন্ন কোম্পানির সিম ক্রয় করলেও মোবাইল কোম্পানির কোড ব্যতীত অন্যান্য নম্বর একই থাকবে।
৩. যদি কলার আপনাকে কল করে তবে কলগুলি এমনভাবে রিডাইরেক্ট হবে যে আপনার এক নেটওয়ার্কের সিমে না পাওয়া গেলে অন্য নেটওয়ার্কের একই নম্বরের সিমে কল যাবে । এতে গ্রাহক নেটওয়ার্ক বদল করলেও কলারকে গ্রাহকের অন্যান্য নম্বর খুঁজে কল করতে হবে না। এতে সকল গ্রাহক যে কোন মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কে থাকলেও এক কলই অন্য অপারেটরে কানেক্টেড থাকবে।
৪. সমস্ত নেটওয়ার্কের সংযোগ এমন হবে যেন গ্রাহক কখনও নেটওয়ার্কের বাইরে বা মোবাইল বন্ধ থাকলে তাকে যে কোন সিমের নেটওয়ার্কে থাকা গ্রাহকরা কল করে না পেলে পুনরায় গ্রাহক সংযুক্ত হলে কল কারীরা তার সন্ধান লাভ করবে। এ সিস্টেমগুলো এখনও শৃঙ্খলা বদ্ধ নয়। একেক অপারেটর একেক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে ,এ বছর (২০১৫ সালে) বাংলাদেশ মধ্য আয়ের পথে অগ্রসর হয়েছে। আশা করা যায় মোবাইল ফোনের অনেক অপারেটরের অনেক ধরনের সিস্টেম সমন্বিত হয়ে গ্রাহক বান্ধব হবে। আমরা সেই দিনগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।


No comments:

Post a Comment