Pages

Thursday, October 29, 2015

সামান্য মোবাইল ফোনের জিপিএস এর অসামান্য ব্যবহার

কয়েক বছর যাবত মোবাইলের জিপিএস ও ম্যাপ ব্যবহার করছি। কোন নতুন স্থানে পারিপার্শ্বিক এলাকা জানা ও নতুন স্থানে গেলে মোবাইল ফোনের গুগল ম্যাপ আর মোবাইলের জিপিএস সত্যি বেশ কার্যকরী। মোবাইলের সাধারণত দশ হাজার টাকার উপরে বাজেটে গেলে সাধারণত প্রায় সকল মোবাইলে জিপিএস পাওয়া যায়। মোবাইল ফোনের জিপিএসও চমৎকার কাজে লাগতে পারে তা একবার আমি উপলব্ধি করেছিলাম। ২০১৪ সালে জুনের দিকে কুষ্টিয়ার বিজিবির একটা ডাবল কেবিন পিকাপ গাড়ী ভোর ৪টায় চোরাচালান অপারেশন শেষে অবৈধ মালামাল ধরে নিয়ে ফেরত আসার সময় কুষ্টিয়া শহরে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এতে দুইজন গুরুতর আহত হয়। তখন বিজিবির বিজিবি সদর দপ্তর রোগীগুলো উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে রোগীদের ঢাকা সিএমএইচে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন সকাল ৫টায় বিজিবি সদর দপ্তর হতে কুষ্টিয়া স্টেডিয়াম অর্থাৎ হেলিপ্যাড এর কোঅর্ডিনেট জানতে চায়। আমি সাথে সাথে ফোন করে আমার লোকদের জিপিএস ও ম্যাপ আনার জন্য নির্দেশ দিলাম। আমি হিসাব করে দেখলাম সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ করতে আমার প্রায় একঘণ্টা লেগে যাবে। ভোর ৫টায় স্টোর খুলবে। সামগ্রী সংগ্রহ করবে। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার বিজিবির লোকেশন থেকে গাড়ী কুষ্টিয়া শহরের স্টেডিয়ামে যাবে তারপর জিপিএস রিডিং নিয়ে হেলিকপ্টারে ব্যবহৃত লংগিচুট ও ল্যাটিচুড ইত্যাদি নোট করবে। অতঃপর এসএমএস কম্পোজ করে বিজিবি সদর দপ্তরের অপারেশন স্টাফকে পাঠাতে হবে। সেই এসএমএস পুনরায় বিজিবি সদর দপ্তরের অপারেশন স্টাফ এয়ার ফোসর্কে দিবে। হঠাত মনে হল কয়েকদিন পূর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কুষ্টিয়ায় হেলিকপ্টারে আগমন করেছেন। কুষ্টিয়া স্টেডিয়ামে অবতরণ করেছেন। সুতরাং এনডিসি বা এসপি হেলিপ্যাডের কোঅর্ডিন্যাট জানাটাই স্বাভাবিক। আমি ভোর পাঁচটায় এনডিসিকে ফোন করলাম। ভাগ্য ভাল। সাথে সাথেই ফোন ধরলেন। আমি দুর্ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে কুষ্টিয়ার হেলিপ্যাডের কোঅর্ডিন্যাট জানা আছে কিনা জানতে চাইলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল। আমার মোবাইলে আছে এক্ষুনি এসএসএস করছি। আমি বিকল্প হেলিপ্যাডের কোঅর্ডিন্যাট আছে কিনা জানতে চাইলাম। আরো অবাক করে দিয়ে বলল বিকল্প কোঅর্ডিন্যাটও দিচ্ছি। আমি মেইন ও অল্টারনেটিভ দুইটি কোঅর্ডিন্যাট সাথে সাথে এসএমএস করে দিলাম। বিজিবি অপারেশন স্টাফ আমাকে কনফার্ম করল। সে এসএমএস পেয়েছে এবং এয়ার ফোসের্র ডিউটি অফিসারকে ফরোয়ার্ড করেছে। এখন শুধু হেলিকপ্টার ফ্লাই করতে বাকী। বেসামরিক প্রশাসনের এধরনের টেকনিক্যাল কাজে তড়িৎ সহায়তা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আমি তাকে একসময় জিঞ্জাসা করলাম কিভাবে কোঅর্ডিন্যাট বের করলেন। সহজ সরল উত্তর। মোবাইল ফোনের জিপিএস আছে না। মোবাইল ফোনেই বের করা যায়। বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা জিপিএস না নিয়ে ঘুরলেও তারা মোবাইল ফোনের জিপিএস নিয়ে ঘুরে। সেদিন তার সুফল পেয়েছিলাম। মোবাইল ফোনের জিপিএস সংক্রান্ত অ্যাপস আছে যেগুলো ব্যবহার করে অতি দ্রুত যে কোন স্থানের লংগিচুড ও ল্যাটিচুড বের করা যায়। সেটা আবার  ইমেইল, ভাইবার, ড্রপ বক্স ও এসএমএসএর মাধ্যমে ফরোয়ার্ড ও শেয়ার ইত্যাদি করা যায়। এখন সকল জিপিএস প্রায় একমিটার পর্যন্ত একোরেসিতে পাওয়া যাবে। মোবাইল ফোনের জিপিএস এর মজাটা হচ্ছে জিপিএস ডাটা যে কোন মাধ্যমে সরাসরি পাঠাতে পারছি। আবার অন্যদিকে জিপিএস এর ডাটা নোটবুকে লিখে তারপর এসএমএস কম্পোজ করে পাঠাতে হবে। বর্তমানে মোবাইল ফোনের জিপিএসগুলো আমার জানা মতে সাধারণ স্যাটেলাইট সিগন্যাল নির্ভর জিপিএস থেকে আরো বেশী একুরেট। স্যাটেলাইট সিগন্যাল আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে এর এ্যাকুরেসির তারতম্য হয়। আর মোবাইল ফোনের জিপিএস স্থানীয় বিটিএস ও ইন্টারনেটকে এইড হিসাবে গ্রহণ করে আবহাওয়ার ও অন্যান্য কারণে স্যাটেলাইট সিগন্যালের কারণে যে এ্যাকুরেসি সমস্যা করে তা দূর করে। তাই মোবাইল জিপিএস কার্যকারীতার দিক দিয়ে বেশ কার্যকরী।
অনেক দিন থেকে মোবাইলের জিপিএস ব্যবহার করলেও বেশ কিছুদিন আগে থেকে জিপিএস এর মোবাইল অ্যাপস গুলি ব্যবহার শুরু করি। গুগল প্লে স্টোরে জিপিএস এর অসংখ্য অ্যাপস রয়েছে। কারো সময় থাকলে এগুলো একে একে ব্যবহার করে দেখতে পারেন। যেটা ভাল লাগে সেটা চালু রাখতে পারেন। আমি “ My GPS Coordinates” অ্যাপসটি ব্যবহার করে আমার কোঅর্ডিন্যাট বা অবস্থান ভাইবারে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পেরেছি। আবার কিছুকিছু কোঅর্ডিনেট ড্রপবক্সে পরবর্তী ব্যবহারের জন্য সেভ করতে পেরেছি। “ My GPS Coordinates” থেকে আরো কিছু খুচরো অ্যাপস ইনস্টল করতে পারবেন যেমন অডোমিটার, অল্টিচুড মিটার ও ডিসট্যান্ট মেজারিং ইত্যাদি। হেলিপ্যাডের জন্য প্রয়োজন জিপিএসএর লংগিচুড ও ল্যাটিচুড এর ডাটা আর এটা মোবাইল ফোনে সহজেই পাওয়া যায়।
সামরিক বাহিনীতে আমরা জিপিএসগুলো মিলিটারি ম্যাপের সাথে ব্যবহার করি। ম্যাপের গ্রিড সিস্টেম অনুযায়ী জিপিএসগুলোর গ্রিড রেফারেন্স দিয়ে থাকে। জিপিএস ইনিশিয়ালাইজ করার সময় কাষ্টমাইজ ডাটার মাধ্যমে আমরা মিলিটারি ম্যাপের সাথে ব্যবহার উপযোগী করতে পারি। আমরা জিপিএস গুলোতে প্রাইমারী স্ক্রিনে সাধারণত মিলিটারি গ্রিড রেফারেন্স এবং সেকেন্ডারি স্ক্রিনে  সাধারণত লংগিচুড ও ল্যাটিচুড সেট করি। আমরা মিলিটারি প্রোগ্রাম জিপিএস থেকে হেলিপ্যাডের জন্য জিপিএস এর সেকেন্ডারি স্ক্রিন থেকে সরাসরি লংগিচুড ও ল্যাটিচুড দিতে পারব। গ্রিড রেফারেন্স দিলে পাইলট তার জিপিএস থেকে লংগিচুড ও ল্যাটিচুড কনভার্ট করে নিতে হবে। আমরাও যে কোন গ্রিড রেফারেন্সকে জিপিএস থেকে লংগিচুড ও ল্যাটিচুড কনভার্ট করে নিতে পারি। এটার কোন সফটওয়্যার বা মোবাইল অ্যাপস আছে বলে আমার এখন পর্যন্ত জানা নাই।
সামরিক অফিসাররা তারা রেকির সময় মিলিটারি ম্যাপ ও জিপিএস ব্যবহার করে। এখন ম্যাপ বা জিপিএস না নিয়েও জিপিএস এ্যানাবল মোবাইল নিয়ে এই একি কাজ করা সম্ভব। মোবাইলে বিভিন্ন স্থানের কোঅর্ডিন্যাট সেইভ করে পরে তা জিপিএস এর মাধ্যমে গ্রিড রেফারেন্সে কনভার্ট করে মিলিটারি ম্যাপে প্লট করে নিলেই হল।
নীচে আমার মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত  “ My GPS Coordinates” অ্যাপস দিয়ে বের করা কোঅর্ডিনেট ড্রপবক্সে সেইভ করলাম তার তথ্যগুলো নিন্মরুপ:
Latitude : 23.92871 (23˙ 55 43.35˜N)
Longitude : 89.00831 (89˙ 0 29.92˜E)
accuracy of signal : 7 m
show on google maps

https://maps.google.com?q=23.92870792870793,89.008312008312

This message was sent with My GPS Coordinates , a free Android application

এখন আমার বাসার এই Latitude : 23.92871 (23 ডিগ্রি 55মিনিট 43.35 সেকেন্ড N নর্থ), Longitude : 89.00831 (89 ডিগ্রি 0 মিনিট 29.92সেকেন্ড E ইষ্ট) দিয়ে সহজেই মিলিটারি জিপিএএস থেকে মিলিটারি গ্রিড রেফারেন্স পাওয়া সম্ভব। আর URL টি মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের ব্রাউজারে কপি পেস্ট করে দিল গুগল ম্যাপে স্থানটির মার্কড স্থানাংক পাওয়া সম্ভব।

এভাবে আরো মাথা খাটিয়ে মোবাইল জিপিএস এর অনেক অনেক ব্যবহার বের করা সম্ভব।
আশা করি আমার অনেক সামরিক বন্ধু যারা দেশে ও জাতিসংঘ মিশনে অবস্থান করছে তাদের লেখাটি কাজে দিবে।


No comments:

Post a Comment