Pages

Wednesday, August 1, 2018

তরুন সমাজের জাগরণ ও আমাদের পরিবহন ব্যবস্থা

বাচ্চারা পবিত্র। তার সততার প্রতীক। শুভ্রতার প্রতীক। তারা অপরাধী নয়। তারা দেশ‌কে ভালবাসে। তারা ইমোশনাল। তারা গড়‌তে জানে। তারা ভাংগ‌বে কেন?
তারা কঠিন ক‌ঠোর ইমোশনাল তাই তো তা‌দের কেউ কেউ ছোট খাট ঘটনায় রাগ ক‌রে সুইসাইড ক‌রে ফেলে। এরা হল তরুণ বা তারুণ্য। তা‌দের এই শক্তি  আটকা‌নোর জন্য নয়। তা‌দের শক্তির গতি অফুরন্ত। তা‌দের গতিতে তারা দেশ গড়ার কারিগর হবে। তারা আমা‌দের ঘুণে ধরা সমাজ‌কে চেনাবে। সমাজ‌কে ঢেলে সাজাবে। তা‌দের দুর্দান্ত শক্তিকে আমরা সমাজের ক্ষত‌কে দূর করার অনু‌প্রেরণায় কাজে লাগা‌তে পারি। তারা আমা‌দের চো‌খে আঙ্গুল দি‌য়ে দেখা‌তে পা‌রে দেখ তোমরা ভুল করছ। তোমরা সমাজ‌কে ঠিক কর। তোমরা কোন ড্রাইভার‌কে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ী চালা‌তে দিও না। তোমরা ফিটনেস ছাড়া কোন গাড়ী চালা‌তে দিও না।
সত্যিই তো চিন্তা ক‌রে দেখি, আমরা কেন লাইসেন্স ছাড়া গাড়ী চালা‌তে দিচ্ছি। তরুণ বাচ্চারা গাড়ীর লাইসেন্স চেক করছে। ফিটনেস চেক করছে। ওদের কাছ থেকে উত্তরটা এরূপ তোমরা পারছ না। কিন্তু আমরা পারছি তাদের ব্যাট‌নিং কর‌তে। আমরা পারছি তা‌দের শর্ট গানের ফায়ার কর‌তে। আমরা তা‌দের বলছি না বাবারা তোমরা রাস্তা দেখিয়েছ। তোমরা এখন পড়তে যাও।
আমি যখন ছোট ছিলাম ক্লাস সিক্স পর্যন্ত বাবার পিটুনি খেয়েছি। আমরা যখন স্কুলে গিয়েছি তখন অনেক মারের মধ্যে ছিলাম। এখন কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থার ধরন পালটাচ্ছে। স্কুলের পিটাপিটি উঠে গেছে। ভায়ালেন্স কমে গেছে। এটা ভাল। বাচ্চাদের যুক্তি দিয়ে বুঝাতে হয়। মার ধরে কোন সমাধান এখন বাচ্চাদের জন্য নয়।
ছোটবেলা একটা গল্প শুনেছিলাম, এক লোকের বাসায় ল্যান্ড ফোনে কল এসেছে, বাচ্চা ফোন ধরেছে। “বাবা তোমাকে চাচ্ছেন”। ছেলের বাবা বলছেন, "বলে দাও আমি বাসায় নেই"। বাচ্চা যথারীতি বলল, আংকেল বাবা বলেছেন, তিনি বাসায় নেই?
বাচ্চারা সাধারণত মিথ্যা বলে না। এরা শুভ্র ও পরিষ্কার। ধীরে ধীরে সামাজিক ব্যবস্থা তাদের পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত করে।
 ২৯ জুলাই ২০১৮ দুইজন ছাত্র/ছাত্রী বাসা চাপার নিহত ঘটনা প্রথমবার ঘটেছে তা নয়। একাধিকবার ঘটেছে। আমরা সজাগ হইনি। আমাদের বাচ্চারা এখন বলছে, যথেষ্ট হয়েছে। এবার থাম। মৃত্যুর মিছিল বন্ধ কর। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি ৯০ ভাগ দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রনহীন গাড়ী চালানোর জন্য। গাড়ী চালানোটা ছেলে খেলা বা খামখেয়ালীপনা নয়। রেসের কিছু নয়। নিয়ন্ত্রিত গতিতে এক ঘণ্টা পরে যাওয়াটা ভাল। রেস দেয়ার কিছু নাই। প্রতিটি মানুষ যেখানে নির্ধারিত সময়ে হাজির হওয়ার কথা, যাতায়তের দ্বিগুণ সময়ে হাতে নিয়ে তাকে বের হতে বলা প্রয়োজন। রেস কেন হবে। ভ্রমন হবে সুখকর ও রিলাক্স।
গন পরিবহন চলবে নিয়ন্ত্রিত গতিতে। এত গতির প্রয়োজন আসছে কেন। কেন বা রাস্তায় ফরমুলা ওয়ান রেস।
ফিটনেস  ছাড়া গাড়ী চলবে না। লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভার গাড়ী চালাবে না। এটাই বড় কথা। এটাই ছোট ছোট বাচ্চারা করে দেখাচ্ছে। সমাজে তারা একটা ঝাঁকুনি দিল। এই ঝাঁকুনিতে সমাজটা যদি ঠিক হয়? বাংলাদেশের কোটি বাচ্চা আজ জানল ফিটনেস ও লাইসেন্স ছাড়া গাড়ী চালানো যায় না। তারা এটার জন্য রাস্তায় নামল। এরা যখন বড় হবে। পুলিশে যাবে। বিআরটিএতে যাবে। গাড়ী চালাবে। আমি আশাবাদী তারা এগুলো মনে রাখবে। তাদের হাত দিয়ে সমাজের পরিবর্তন আসবে। আমাকে যদি বলা হয় জল, স্থল ও আকাশ পথে সবচেয়ে অনিরাপদ যাতায়ত কোনটি। আমি নিশ্চিত আপনি বলবেন, আকাশ পথ। কারণ প্লেন ক্রাশ হলে মানুষ বাঁচে না। অথচ অবাক করার বিষয় হল, সবচেয়ে নিরাপদ  মাধ্যম হল আকাশ পথ। কারণ এতে নেয়া হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা। আমরা স্থল পথকে আরো বেশী নিরাপদ করতে পারি। তেমন কঠিন কাজ বাচ্চারাই আমাদের শিখিয়েছে।
প্রথমত: ফিটনেস বিহীনগাড়ী রাস্তায় উঠবে না। দ্বিতীয়ত: লাইসেন্স ছাড়া কেউ গাড়ী চালাবে না। তৃতীয়ত: সকল গাড়ী নিয়ন্ত্রিত গতিতে চলবে। এগুলো নিশ্চিত করা কি কঠিন কাজ? অবশ্যই না। পরিবহন মালিক ও চালকদের সচেতন করতে হবে। আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
আমি আশাবাদী আজকে পরিবহন সেক্টরে অনিয়ম দূর কারার জন্য বাচ্চাদের এই জাগরণ তারা বড় হলে ভুলবে না। আমরাও নতুন বাংলাদেশ পাব।

1 comment:

  1. অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা.. সকলের উচিত যার যার অবস্থানে থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া. ...

    ReplyDelete