Pages

Saturday, August 3, 2019

জীবনের সফলতা ও বিফলতার গল্প

জীবনের  ২৭ বছর ঢাকার বাই‌রে চাকুরী ক‌রে ঢাকায় যখন আসলাম তখন আত্মীয় স্বজন অনেকেই আমার বাসায় আসছেন। অনেকের অনেক রকমের জীবনের গল্প শোনা যায়। কারোটা কষ্টকর। কারোটা চ্যা‌লেঞ্জ‌িং। কারোটা শুধু সুখ আর সফলতা। একজন আত্মীয় বললেন, তিনি অনেক সফল হ‌য়ে‌ছেন। গ্রামের থেকে উঠে এসে সরকারী চাকু‌রে হ‌য়ে‌ছেন। তারপর কষ্ট ক‌রে গেছেন। মেয়েদের একজন ফরেন সার্ভিস, আরেকজন ডাক্তার আর এক মে‌য়ে এসএসসি ভাল ফলাফল ক‌রে ঢাকার নামী ক‌লে‌জে ভর্তি হ‌য়ে‌ছে। তার সুখের উৎচ্ছাস আমি বেশ উপ‌ভোগ করলাম। ঘণ্টা দুয়েক বেড়ালেন পুরো পরিবারের ফিরিস্তি দি‌য়ে দিলেন। মানুষ সন্তানদের সুখে এত সুখী হয় হয়ত আমার জানা ছিল না। যখনই তিনি বলেই ফেলছেন, আমি অনেক সুখে আছি। মনে মনে বল‌তে ইচ্ছে করল, এখনই পরিবারের কেউ ক্যান্সারে পড়ুক। সুখ জিনিষটা কোথায় ছুটে যাবে তা টের পাওয়া যাবে। ভাগ্যিস মনে আসলেও মুখে আসেনি।
আর একদিন আ‌রেক‌ আত্মীয় আসল। তার সফলতা অসাধারণ। তার এক ছেলে এক মে‌য়ে রুয়েট পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার। আর এক মে‌য়ে বুয়েট পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার। দুই মে‌য়ের একজন অস্ট্রেলিয়া অন্যজন আমেরিকায় স্বামীসহ থা‌কে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার দেশের বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকুরী ক‌রে প্রায়ই বিদেশ ভ্রমণে থা‌কে। পুত্র বধুও অনেক উচ্চ বেতনে চাকুরী ক‌রে। ছেলে মেয়েদের ভীষণ ব্যস্ত জীবন। আত্মীয় ভয়ানক সংকটে থাকেন। কখনও এই মে‌য়ে কখ‌নো অন্য মে‌য়ে কখনও ছেলে কোথায় যে উনি থাকেন, কি যে করেন, ভয়ানক সুখের অবস্থা তার। আত্মীয় আধঘণ্টার মধ্যে তার সন্তানদের সফলতার গল্প বলে গেলেন। সহজেই  বুজলাম, তিনি সফলতার গল্পে অনেক দক্ষতা অর্জন করছেন। রত্নগর্ভা পুরষ্কারটা তার প্রাপ্য।
তা‌দের এই সফলতার গল্পগু‌লি আমা‌কে আনন্দ দিয়েছে। বেশ মজা পেলাম।
এখন বলি আরেক গল্প। আমার আরেক আত্মীয় যিনি সফল সরকারী অফিসার ছিলেন। সন্তানরাও পড়া‌শোনা ক‌রে বিদেশে আছে। কিন্তু সমস্যা একটা রয়েছে সন্তানরা বি‌য়ের বিষ‌য়ে আগ্রহী নয়।
তবে নিখাদ সুখের সাগরে আমার দুই আত্মীয়কে পেয়েছি। তেমন আর কাউ‌কে পাইনি। কারো একাধিক সন্তানাদির সকলে সমভাবে সফল হয়নি। কারো পেয়েছি পরিবারের কোন কোন সদস্য অসুস্থ। কারো পেয়েছি সন্তান উচ্চ শিক্ষিত হ‌য়ে‌ছে। চাকুরী পাচ্ছ‌ে না। কারো হয়ত কোন সন্তান অটিস্টিক। নানা পরিবারের নানা সমস্যা। আল্লাহ দুই‌টি পরিবারকে সফল করেছেন ভেবে সত্যি ভাল লেগেছে। কারণ এত সফলতা সংখ্যা সমাজে তেমন বেশী নেই। 
যা‌দের সন্তান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা, জজ ব্যারিস্টার হল না বা অসুস্থ থাকল বা বিফল হল তারা কি ভেঙ্গে পড়বে। মুষড়ে পড়বে। অবশ্যই না জীবনটা অনেক অনেক চ্যা‌লে‌ঞ্জিং। মুষড়ে পড়া যাবে না। 
সফলতা আসে মূলত: কষ্ট ক‌রে চ্যালেঞ্জের মধ্য দি‌য়ে। আমা‌দের দেশের অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা অনেক শিক্ষিত নয় কিন্তু তর তর ক‌রে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমি কতটুকু আমার সন্তান‌দের নি‌য়ে সফলতা পাব আমি জানি না। তা‌দের যে লক্ষ্যগু‌লি আমি দিয়েছি তা দ্বারা উপরের মানুষদের মত সফল পিতা বা সন্তানদের জন্য গর্ব হয়ত আমার থাকবে না। কারণ আমার সন্তান‌দের বলেছি আমি জানি তোমরা পাঠ্য বই‌য়ের বাই‌রে প্রচুর পড়। এই  পৃথিবীর জন্য কিছু করবে। আইডিয়া বা পরিবর্তন নি‌য়ে কাজ করবে। লক্ষ্য থাকবে তোমরা যেন অনেক মানুষের কল্যাণ কর‌তে পার বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কর‌তে পার। চাকুরী আর নিজের নিরাপদ জীবন নয়, চ্যালেঞ্জ নি‌তে শিখ আর প্রান্তিক মানুষ‌কে স্বপ্ন দেখাও। এই সাধনায় তোমা‌দের কোন সম্পদ না থাকলেও আমি তোমা‌দে‌র নি‌য়ে গর্ব‌িত থাকব।
আমি ক্লাসের বই‌য়ের বাই‌রে পড়ুয়া একজন ছাত্র ছিলাম। বাবার আগ্রহে ক্লাসে ফাস্ট হওয়া আমি ভুল ক‌রে ক্যাডেট কলেজে ঢু‌কে যাই। ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার পর হা‌রে হা‌রে টের পেলাম আসলে এই  স্থানটি আমার জন্য নয়। এইচএসসি পাশ করার পর মনে হল বাবা রিটায়ার করেছে আর্ম‌িতে চলে যাই। বাবার টেনশন কমবে চাপ কমবে। চলে গেলাম সামরিক জীবনে যা আমার সাথে যায় না। মাঝে মাঝে মনে হয় নিজের একটা স্ব‌স্থিকর ও নিরাপদ জীবন হল। কিন্তু আমার দ্বারা সমাজের কি হল। কিছুই না। আমি যদি সচিবও হতাম কতটুকু সফল হতাম। কোন সফলতা আমি দেখি না। কয়েক টাকা রোজগার ক‌রে নিজে গাড়ী বাড়ী আর এসিতে থাকা ছাড়া আসলেই কিছুই নেই। যে মানুষটা অনেক মানুষের রিজিকের ব্যবস্থা কর‌তে পা‌রে সে সফল। যে মানুষ প্রান্তিক মানুষের পড়া‌শোনার ও জীবনমা‌নের উন্নয়‌নের ব্যবস্থা কর‌তে পা‌রে সে সফল। যে মানুষ প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসা দি‌তে পা‌রে সে সফল। যে মানুষ প্রান্তিক মানুষের ভাগ্য বদলা‌তে পা‌রে সে সফল।
ভোগবাদী সমাজে অনেকেরই আমার বলা সফলতা‌কে হাস্যকর চিন্তা করবেন। যে যেভাবে চিন্তা করুন। মনের সন্তুষ্টি যেভাবে পূনাংগ পায় সেটাই আসল সফলতা ও সুখ। অটিস্টিক বাবা মা যদি তার সন্তানটা‌কে আবাস, খাবার ও পরিবার দি‌তে পারেন সেটা অনেক বড় সফলতা ও সন্তুষ্টি। ড্রাগ অ্যা‌ডিক্ট বাবা মা তার সন্তান‌কে যদি স্বাভাবিক জীবনে ফেরা‌তে পারেন সেটা অনেক বড় সফলতা। তাই পরিবেশ ও চ্যালেঞ্জের কারণে সন্তান নি‌য়ে সফলতা একেক মানুষের কাছে একেক রকম।

No comments:

Post a Comment