আমার একটা অভ্যাস হল কোন একটা কিছু কেনার আগে ও পড়ে তা নিয়ে কিছুদিন ইউটিউব দেখা ও ইন্টারনেট থেকে তথ্য নেয়া। প্রায় দশ বছর আগে আমি বাজারের সবচেয়ে কম দামী একটা চাইনিজ এসি কিনি। পরীক্ষা করার জন্য। কেমন চলে ও কত দিন চলে। দোকানদার বলেছিল ৭/৮ বছর ব্যবহার করবেন। নস্ট হলে মেরামত করবেন না। বিক্রি করে দিবেন। ঠিক সাত বছর চলার পর কম্প্রেশর নস্ট হল। একজন বলল, নতুন এসি কেনার চেয়ে কম্প্রেসর পাল্টিয়ে নিন। তাই করলাম, চলল এক বছর ১৪ হাজার টাকা লস হল। তারপর ছেলেমেয়েদের রুমের এসি কিনতে গেলাম ঢাকা সেনানিবাসের সিএসডি'তে। দামী এসির মধ্যে স্যামসং আছে। আমার একজন পরিচিত জনের সাথে দেখা হল। এসির আলোচনা হল। বলল, ইনভার্টার এসির মধ্যে প্যানাসনিক, এলজি ও স্যামসং ভাল। কারন এরা এসি টেকনোলজি উন্নয়নের জন্য বিশাল বিনিয়োগ করছে। যা হোক স্যামসং এসি কিনলাম। এর নানা সুবিধা আছে বেশ ভাল লাগল। ছেলেমেয়েরা মহা খুশী। গল্পটা এখানে শেষ হতে পারত। সেদিন ছেলেমেয়েরা আমাদের রুমের উইন্ডো জেনারেল এসির সাথে স্যামসং এসির এক্সচেঞ্জ অফার নিতে বলল।
আমি কিনলাম। তারপর শুরু করলাম ভাল কিনলাম না মন্দ কিনলাম গবেষনা। এটা হল উল্টো গবেষনা। এটা হত না। ছেলেমেয়েরা বলায় স্যামসং এসি আগে কিনলাম। তারপর গবেষনায় বসলাম। জানার জন্য। কিছু মজার ফিচার পেলাম শেয়ার করছি।
১। আসলেই বিদ্যুৎ এর ব্যবহার কম হয়।
২। শব্দ অনেক অনেক কম।
৩। ৮০ থেকে ৪৬০ ভোল্ট পর্যন্ত স্ট্যাবিলাইজিং ক্যাপাসিটি। লো ভোল্টেজ সমস্যা নয়। স্ট্যাবিলাইজার লাগে না। বিদ্যুৎ যতই সমস্যা করুক। নো টেনশন।
৪। বাইরের ইউনিট তিন মাস সমুদ্রের স্যালাইন ওয়াটারে ভিজিয়ে রাখার পর পুনরায় একই পার্ফরমেন্স পাওয়া গেছে (ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্য)।
৫। বজ্রপাতে ক্ষতি হয় না।
৬। এতে অাছে ডোরাফিন নামক বিশেষ কনডেন্সার যাতে কম গ্যাস লাগে ও দ্রুত ঠান্ডা হয়।
৭। ইনডোর ইউনিটে মাইক্রো ফিল্টার আছে যা রুমের বাতাসের ধুলাবালি ও ময়লা ট্র্যাপ করে। তার জন্য ফিল্টারটা মাসে একাধিকবার পরিষ্কার করা ভাল।
৮। অটো টেম্পারেচার বাইরের গরমের সাথে একটা সামঞ্জস্য রক্ষা করে রুমের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৯। কমফোর্ড মুড আছে। যেটা রাতের প্রথমে রুম ঠান্ডা রাখবে। ভোর রাতে অটোমেটিক এসি কুলিং বন্ধ করে ফ্যান মুড চালু করে দেয়। যেন ভোরবেলা ঠান্ডায় ঘুম না ভাংগে ও কাথা দিতে না হয়।
১০। দুই স্টেজ কুলিং অপসনটা বাইরে থেকে এসে দ্রুত শরীর ঠান্ডা করার জন্য ভাল।
১১। সিংগেল ইউজার মুডে রুমে একলা থাকলে বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানোর অপসন।
১২। অন্য এসির মত টাইমার দিয়ে অন ও অফ করার অপশনটাও আছে।
১৩। দোকানদার বলল ১২/১৩ বছর এটা মেরামত ছাড়া ব্যবহার করতে পারবেন। আমার কাছে ঠিকই মনে হচ্ছে। চাইনিজ সবচেয়ে কমদামী ৭ বছর ব্যবহার করেছি। এটা এত প্রোটেকশন থাকার পর হয়ত কথাটা ঠিক হতে পারে। কারন কম্পেসর নস্ট হলে দশ বছরের মধ্যে বদলিয়ে দিবে।
১৩। এদের ওয়ারেন্টি সিস্টেমটা ভাল। ওয়ারেন্টি কাগজ রাখার প্রয়োজন নেই। ইংরেজী নামের বানানসহ বললে ও ফোন নম্বর বললে তারা সাপোর্ট দেয়। দশ বছর কম্প্রেসর ওয়ারেন্টি কাগজ না থাকারই কথা।
১৪। যাদের গায়ে সরাসরি ঠান্ডা বাতাস লাগলে সমস্যা হয় তাদের জন্য এদের মডেল আছে। উইন্ডো না খুলে ছাকুনীর মাধ্যমে বাতাস ছড়িয়ে গায়ে ঠান্ডা না লাগিয়ে রুম ঠান্ডা করবে।
১৫। ওদের কিছু এসিতে ঠান্ডা গরম দুটো করার অপসন আছে।
১৬। আয়নাইজাররে মাধ্যমে জীবানু মারার অপশন আছে।
তবে কিছু ফিচার মিসিং আছে। যেমন: ওয়াই ফাই, ইন্টারনেট ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এসি চালনাটা এদের আছে কিনা জানি না খুজে পাইনি। যেটা বর্তমানে ওয়ালটন থেকে শুরু করে অনেক এসিতে আছে। এই এসি ব্যবহার করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এমন অভ্যাস হয় পরে অন্য এসি'র ২/৩ ডিগ্রি তাপমাত্রার আপ ও ডাউনে অস্বস্তি লাগে। অভ্যাস নস্ট হয়। এ ধরনের এসি ছাড়া অন্য এসিতে ভাল লাগবে না। জেনারেল এসি সবাই বলেন বেস্ট। আমিও তাই বলি। ২৫/৩০ বছর টিকে যায়। বিদ্যুৎ ও কমফোর্ডের দিক দিয়ে আমার কাছে মনে হয় জেনারেল এসি থেকে স্যামসং এসি ভাল। হোক না এর আয়ু ১২/১৩ বছর। কারন ১২ বছরে এমনিও জেনারেল এসি অপেক্ষা লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিলে বাচবে যার দ্বারা পুনরায় আবার নতুন এসি কেনা যাবে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী জেনারেল এসি অপেক্ষা স্যামসং ভাল অপশন।
No comments:
Post a Comment