Pages

Friday, August 16, 2019

বাংলাদেশের চামড়ার অপচয়

আমার এক আত্মীয় আক্ষেপ ক‌রে বললেন, ছোট‌বেলায় দেড় হাজার, দুই হাজার টাকায় চামড়া বিক্রয় কর‌তে দেখতাম। গরীব মানুষ বা মাদ্রাসায় একটা ভাল প‌রিমান টাকা দান করা যেত। আজ  ২০/২৫ বছর পর চামড়ার দাম দেখছি মাত্র ৩০০ টাকা। এটা কিভাবে সম্ভব। ৩০০ টাকার জুতার দাম আজ ৩০০০ টাকা। সমস্যাটা কোথায়। সমস্যা হল গরু ও খাসি বেশী কুরবানী হচ্ছ‌ে। মানুষের সক্ষমতা বহুগুণে বেড়েছে। সে অনুযায়ী ট্যানারিরা চামড়া রপ্তানি বা ব্যবহার কর‌তে পারছে না। ধরুন দেশে যদি এক কোটি পশু জবাই হয় তবে চামড়া হবে এক কোটি। এক‌টি চামড়ায় যদি গড়ে দশ জোড়া জুতা হয় তবে এক কোটি চামড়ায় দশ কোটি জুতা হবে। দশ কোটি জুতা কেনার মানুষ আসলে নাই। বিদেশে রপ্তানিও বাড়ে নাই চাহিদা মাফিক। কারণ বাংলাদেশের ট্যানারি বর্জ্য পরিশোধন আন্তর্জাতিক মান অর্জন ক‌রে নাই। গ্রিন বা পরিবেশ বান্ধব পরিবেশে চামড়ার প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছ‌ে না। তাই রপ্তানি কম। চামড়া বছরের পর বছর অবিক্রীত ও অব্যবহৃত থাকছে ট্যানারি মালিকদের কাছে। চামড়া নষ্ট হচ্ছে আড়তদার‌দের কাছে। অনেক সময় লবণের দাম মিল মালিকরা বাড়িয়ে দিলে চামড়ার আড়তদাররা চামড়া লবণ দি‌তে না পে‌রে চামড়া নষ্ট ক‌রে ফেলছে। তাহলে উপায় কি? উপায় আছে চামড়ার বিকল্প ব্যবহার বাড়া‌নো। জুতায় যেভাবে ব্যাপকভাবে আর্টিফিশিয়াল লেদারের ব্যবহার বাড়াচ্ছে তা‌তে ক‌রে চামড়ার চাহিদাও কমে যাচ্ছ‌ে। বাংলাদেশের উন্নয়নে এক কোটি চামড়ার ব্যাপক ব্যবহার কর‌তে হবে। মা‌টি‌তে পুতে ফেললে হবে না। আগে গরুর হাড় অনেকেই  শুকাত, শিং শুকাত, লেজ শুকাত কারণ এগু‌লো কেজি দ‌রে বিক্রয় হত। এখন এগু‌লো ব্যাপকভাবে লোকজন ফেলে দেয়। পরিবেশ দূষণ হয়। কারণ আর কিছুই নয় ১৯৮০ সালে হয়ত ২০ % পরিবার কুরবানী দিত,১৯৯০ সালে ৩০%, ২০০০ সালে ৪০% ২০১০ সালে ৫০% এবং ২০১৯ সালে ৬০% পরিবার কুরবানি দিচ্ছে। কারণ সবচেয়ে কম বেতন যার তারও ঈদ বোনা‌সের টাকা দি‌য়ে একটা ভেড়া বা ছাগলের দাম হয়। গ্রামে ছোট গরুর সাত ভাগের এক ভাগ দি‌তে পা‌রে।

তাই সাড়ে ষোল কোটি মানুষের দেশে কোরবানীর সক্ষমতা বাড়‌তেই থাকবে। 

তাহলে প্রশ্ন হল, আমরা কি কুরবানির চামড়া মা‌টি‌তে পুতে ফেল‌তে থাকব। নাকি নানা ব্যবহারে এগিয়ে যে‌তে পারি। অনেক এলাকার মানুষ মাথার চামড়া খায়। এটা‌কে হালিম, কাবাব ও নানা খাবারে কচকচি খাদ্য হিসাবে ব্যবহারের প্রচলন ঢাকার হো‌টেল গু‌লো‌তে চালু করা যে‌তে পা‌রে। আমরা ভুঁড়ি খাই আবার ভুঁড়ি দি‌য়ে তবলা বা ঢো‌লে ব্যবহার করা যায়। আমরা গরুর বিভিন্ন অংশ আফ্রিকান মাগুর‌কে খাওয়াই। সেখানে চামড়া গরম পানি দি‌য়ে লোম পরিষ্কার ক‌রে মানুষের খাদ্য ও মাছের খাদ্য করা যাবে। আগের দিনে ফ্রিজ না থাকার যুগে দেখতাম মাংস হলুদ দি‌য়ে সিদ্ধ ক‌রে বা কাচা শুঁকিয়ে ম‌য়েরা গরুর মাংস সংরক্ষণ করতেন। একই ভাবে চামড়া পশম ছড়িয়ে তা শুঁকিয়ে মানুষের খাদ্য ও মাছের খাদ্য হিসাবে সংরক্ষণ করা যায়। পোল্ট্রি বা মাছের ফিডে ৩০% প্রো‌টিন যোগ কর‌তে হয়। এটা ট্যানারির চামড়ার মাংসল বা অব্যবহৃত উপজাত ব্যবহার করা হয়। ট্যানারীর সমস্যা হল তা‌দের প্রক্রিয়াটায় লোম ছাড়া‌নো ও প্রসেসের প্রক্রিয়াটা হল রাসায়নিক ব্যবহার ক‌রে আর এভাবে পোল্ট্রি ফিড বিষাক্ত হ‌য়ে যায়। আপনি গরুর চামড়া একফুট দেড় ফুট কেটে চামড়া ছাড়িয়ে শুঁকিয়ে নিন। তারপর ভুট্টা বা অন্য উপকরণ কিনে আপনি পোল্ট্রি বা মাছের ফিড তৈরি করুন। অর্ধেক চামড়া যদি আমরা গরম পানি দি‌য়ে পশম ছা‌ড়ি‌য়ে শুঁকিয়ে আমরা ফিড তৈরি করি তবে বিদেশ থেকে দেশে ফিডের প্র‌ো‌টিন আনার প্র‌য়োজন পড়বে না। আমরা মাছ ও পোল্ট্রি ফিড কম দামে রাসায়‌নিকমুক্ত ভাবে তৈরি কর‌তে পারব। পটুয়াখালী জেলার ন্যায় চামড়াকে ভুঁড়ির ন্যায় কচকচে খাওয়ার অভ্যাসটা না হয় আমরা ক‌রেই নিলাম।

আল্লাহ কুরবানির নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কুরবানির কারণে বিশৃঙ্খলা, সে‌ন্ডি‌কেট ও অপচয় কর‌তে বলেননি। সকলে সচেতন হলে চামড়ার যথাযথ ব্যবহার সম্ভব হবে। আমরা আশা করব আগামী বছর আর চামড়া কেউ কবর দিবে না। কাচা চামড়া বিদেশে রপ্তানি হবে, মানুষ খাবে, পোল্ট্রি ও মাছের ফিডে স্বাস্থ্যকর চামড়ার প্র‌ো‌টিন ব্যবহার হবে।

No comments:

Post a Comment