যাদের আয় মাসে ৩ লাখ বা তার উপরে তাদের এক ধরনের চিকিৎসা হবে। তাদের জন্য রয়েছে স্কয়ার, ল্যাব এইড, ইউনাইটেড ইত্যাদি হাসপাতাল। যাদের আয় মাসে ১ থেকে ৩ লাখ টাকার মধ্যে তাদের চিকিৎসা এক ধরনের। তাদের জন্য আছে জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, বারডেম, ইবনে সিনা, পপুলার ইত্যাদি।
আয় অর্ধ লাখ/১ লাখ টাকা তাদের এক ধরনের চিকিৎসা হবে। আর তাদের জন্য পাড়াগাঁয়ের ক্লিনিক আর অন্যান্য প্রাইভেট হাসপাতাল। এটাই স্বাভাবিক। যাদের আয় ২০ হাজারের নীচে তারা সরকারী হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোন স্থান সুবিধাজনক হবে না।
আমার এক আত্মীয় ইউনাইটেড থেকে ২৫ হাজার টাকা প্যাকেজে একদিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে এনজিওগ্রাম করালেন। ইউনাইটেড হাসপাতালে আমি তাকে দেখতে গেলাম। পরিবেশ ও সার্বিক আয়োজন দেখে ভাল লাগল। কেমন একটা রেস্টুরেন্ট বা হোটেল হোটেল মনে হল। এর কয়েকদিন পর আমার সেই আত্মীয়ের তীব্র পেটে ব্যথা হল। আবার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হল। এবার তিনদিন হাসপাতালে থাকলেন। জানা গেল গল্ড ব্লাডার স্টোন হয়েছে। অপারেশন প্রয়োজন। তবে এখন নয়, তা করতে হবে একমাস পর। ওনাকে তিন দিনে ইউনাইটেড খরচ করাল ৯৬ হাজার টাকা। কারণ প্রতিদিন কেবিন ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সেদিন পত্রিকায় দেখলাম ডেংগু আক্রান্ত হয়ে ২২ ঘণ্টা পরে মারা যাওয়া ১ জন কলেজ ছাত্রের চিকিৎসার জন্য স্কয়ার হাসপাতালে বিল হয়েছে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা।
এই টাকাটা আমাদের মধ্যবিত্তের জন্য অনেক অনেক টাকা। যার মাসিক ইনকাম ১০/১২ লাখ টাকা তার জন্য স্কয়ারের চিকিৎসা তেমন খরচের ব্যাপার নয়। কিন্তু যার আয় লাখ টাকার নীচে তার জন্য বেশী। ইউনিভারসিটির মধ্যবিত্ত পরিবারের ডেংগু আক্রান্ত ছাত্রকে নিয়েছে স্কয়ার হাসপাতালে। আমার প্রশ্ন হল, তাকে তো সামর্থ্যের মধ্যে পিজি বা বারডেমে নিতে পারত। সরকারী হাসপাতালের ভাল দিক হল, ফ্লোরে রেখে হলেও চিকিৎসা দিবে। প্রয়োজনে জাজিম ও বালিশ কিনে বা ভাড়া নিয়ে সরকারী হাসপাতালের ফ্লোরে শুয়ে পরেন। তাতেও আপনার ১ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা ২২ ঘণ্টায় খরচ হবে না। সরকারী হাসপাতালে দিনে রাতে ডাক্তার এখন থাকেন। না পেলে ৯৯৯ কল করে সমাধান পাবেন। এখন শুদ্ধাচারের যুগে অনেক হাসপাতালে ডিজিটাল অ্যাটেন্ডেন্টস সিস্টেম আছে। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে রোগী মারা গেলে ডাক্তার ডিপার্টমেন্টাল শাস্তি পাবেই। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে এই জবাবদিহিতা আছে বলে আমার জানা নাই। সরকার ও প্রশাসন এখন প্রান্তিকদের নিয়ে চিন্তা করে। বাজেটও দেয়ার চেষ্টা করে। অনেক সরকারী হাসপাতালে নানা সুবিধা দেয়ার জন্য ডোনার পাওয়া যায়। তারা হাসপাতালে নানা ব্যবস্থা করে থাকে। সেদিন অবাক হলাম, একজন ডিআইজি বললেন, একজন ডোনার পেয়েছেন তিনি ঢাকা শহরে সমস্ত থানার হাজতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে চান। ডিআইজি সেই ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলেন, আপনি কেন ডোনেশান দিবেন। ব্যবসায়ী বলেছিল, আমি কিছুদিন থানা হাজতে কাটিয়েছিলাম। টেপের অপরিষ্কার পানি আমি খেয়েছি। আমার পানির কষ্টের অভিজ্ঞতায় মনে হয় হাজতিরা অপরাধী হলেও মানুষ। স্বাস্থ্যকর পানি খাওয়ার অধিকারটুকু তার আছে। এটা বললাম এজন্য যে, প্রাইভেট ডোনার ও সরকার মিলে অনেক হাসপাতালের উন্নয়ন করা যায়। একই হাসপাতালে পেমেন্ট ও ননপেমেন্ট চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা যায়। শুধু রাস্তাটা বের করতে হবে ও পরিকল্পনা অনুযায়ী আগাতে হবে। বাংলাদেশের সরকারের নাকি ঔষধ কোম্পানী আছে। কারো জানা আছে কিনা আমার জানা নাই তারা নাকি কমিউনিটি ক্লিনিকে ফ্রি ঔষধ সাপ্লাই দিয়ে থাকে। আমি চাকুরীর সুবাদে সরকারী সাপ্লাই ঔষধ খাই। ধারনা করা হয়, প্যারাসিটামল একটার জায়গায় দুটো খেতে হতে পারে । হয়ত ট্যাবলেটে যে পরিমাণ উপাদান থাকার কথা তা নাও থাকতে পারে। তবে কম হলেও উপাদান আছে। কিন্তু নকল ঔষধে উপাদান নাই। তাই সহজে রোগমুক্তি হয় না। কানাডা, ফ্রান্স ও ইউকেতে সরকার মান নিয়ন্ত্রণ করে অনেক কম দামে ঔষধ তৈরি করে। আমাদের দেশের সরকার প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সিএমএইচ ও সকল সরকারী হাসপাতালের জন্য সরকারী ব্রান্ডের ঔষধ তৈরি করতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশ সরকারীভাবে ভাল মানের ঔষধ তৈরি করতে পারলে বাংলাদেশও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভাল মানের ঔষধ বানাতে পারবে। ক্যান্সার চিকিৎসায় সিএমএইচ ভাল মান প্রদর্শন করতে পেরেছে। সেখানে অনেক অসামরিক ব্যক্তিবর্গ চিকিৎসা নিতে পারছেন। যারা বিদেশে ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট নিতেন তারা আজ দেশে ট্রিটমেন্ট নিচ্ছেন। অনেক বৈদেশিক মুদ্রা বেঁচে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করলে সকল সরকারী হাসপাতালকে উন্নত চিকিৎসালয় বানাতে পারি। সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভলান্টিয়ার ও ডোনারদের অবদান নেয়া যায়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে দালাল কমানো যায়। কারণ মাসে ২০,০০০ টাকার নীচে রোজগারের মানুষ হল ৮০% তাদের রক্ষা করার জন্য সরকারী হাসপাতালগুলোকে শক্তিশালী করাটা আজ সকলের জন্য জরুরী। আমাদের উচিৎ হবে বিভ্রান্ত না হয়ে সামর্থ্যের বাইরে কোন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা না নেয়া। বুঝতে হবে অনেক মন্ত্রী মিনিস্টারও পিজি হাসপাতালের মত সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এরশাদ তো সারা জীবন সরকারী সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। তাই সরকারী চিকিৎসালয়কে বিভ্রান্তির মধ্যে না রেখে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
No comments:
Post a Comment