Pages

Monday, May 12, 2014

নদীর জল ঘোলাও ভাল

আজ অনেকদিন পর আমার নদীর পানিতে নেমে গোসল করতে ইচ্ছে হল ৷ টল টলে সবুজ পানি ৷ দেখতে পাই অনেকে সে পানিতে গোসল করছে ৷ কিন্তু যখন চিন্তা করি ৷ আমাদের গ্রামে এরূপ নদী আছে আমি সে নদীতে গোসল করেছি আজ আমি তা পারছি না ৷ মনে হচ্ছে পানিটা অপরিষ্কার ৷ মনে হচ্ছে পানিতে গরু গোসল করছে, টয়লেটের ময়লা পরছে ৷ ময়লা আবর্জনায় ভরা নদীর পানিতে তবুও সাতার কাটা ও ডুব দেয়ার জন্য মনটা বেশ টানছে ৷ আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে নদী দূষণের পরিমাণ এত ভয়াবহ ছিল কি? তখন নদীতে মরা গরু,ছাগল,কুকুর ইত্যাদি ভেসে থাকত। মাঝে মাঝে মরা মানুষও ভেসে যেত। নদীর উপর অনেক টয়লেট আগে দেখা যেত।
এত দূষণের পরও গ্রামে গেলে নদীতে গোসল করেছি। আমার কৃষক বড় চাচা বলত, “জাতের মেয়ে কালোও ভাল , নদীর জল ঘোলাও ভাল। একবার মনে আছে গোসল করছি এমন সময় দেখলাম কি যেন ভেসে আসছে। ভাল করে তাকিয়ে দেখি মানুষের বিষ্ঠা ওরে বাবারে বলে দৌড়ে পাড়ে উঠলাম। কুমিল্লার সালদানদীতে কত ডুব দিয়েছি । বাবার চাকুরীর সুবাদে বরিশালে ছিলাম প্রায় ছয় বছর। আমাদের বরিশাল শহরের চানমারী টিএন্ডটি(বর্তমান বিটিসিএল) কম্পাউন্ডের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কীর্তনখোলা নদী। সেখানে আমরা গোসল করতাম। মনে আছে ভাটার সময়টা নদীতে নামতাম না। আর জোয়ারে মূলত গোসল সারতাম। পানিগুলো মোটেও স্বচ্ছ ছিল না। তারপরও মনের আনন্দে গোসল করেছি। এমনকি মুখে পানি নিয়ে কুলি করেছি। এসব করতে গিয়ে মাঝে মাঝে পানিও গিলে ফেলেছি।
          আজ ৩০ বছর পর নদীর পানিতে গোসল করার ইচ্ছের পর মনে ভয় এ পানিতে গোসল করলে অসুখ করবে নাতো। ভয়টার কারণ হয়তবা দীর্ঘদিনের অভ্যস্থ্ পরিবেশ থেকে মূলত ভয়গুলি আমি পাচ্ছি। সামরিক ট্রেনিং এর সময় প্রায়শই পুকুরে সাতার কাটতে হয়েছে। এখন সর্বশেষ সাতার কেটেছি সেনানিবাসের সুইমিং পুলের স্বচ্ছ পানিতে। আর এ কারণে নদীর পানিতে সাতার কাটার তীব্র ইচ্ছেটা বাস্তবায়নে চলে আসে নানারূপ সংকোচ। তাই অলস মানসিকতা খুঁজে ফেরে নানা অজুহাত। আর সবচেয়ে বড় অজুহাত হল পরিষ্কার পানির অজুহাত। শহুরে কম বেশী পুকুর বিদ্যমান। নদী নালা যা আছে পানির পরিমাণ কম। আর আমি যে নালার পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম তা হল জিকে প্রজেক্টের নালা। পানি প্রবহমান ও স্বচ্ছ। ডুব দিতে মনে দ্বিধা নেই। তবুও দ্বিধা হয় আমাদের চারিদিকে মানুষের পরিবেশ রক্ষা করার সচেতনতার অভাব দেখে। বিভিন্ন ময়লা আমরা নদ নদীতে ফেলি। এটা অন্যায়। আগের মত উন্মুক্ত টয়লেট নদী বা খালের উপর না থাকলেও এখন যে উৎপাতটি দেখা যায় তা হল বাসাবাড়ির ময়লা, বাজারের ময়লা, হাসপাতালের বর্জ্য ইত্যাদি ফেলে আমরা যে শুধু নদী ও খাল দূষণ করছি শুধু তা নয় আমরা ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছি। নদী ও খালে বাসাবাড়ি ও বাজারের অ-পচনশীল বর্জ্য ভয়াবহ ভাবে পানির ফ্লো নষ্ট করে দিচ্ছে। নদী ও খাল নাব্যতা হারাচ্ছে। এর ভয়াবহতা অত্যন্ত মারাত্মক। কুষ্টিয়া অঞ্চলের জিকে প্রজেক্টর ফীডার ক্যানেলে যখন পানি বহমান থাকে তখন সত্যি খুব ভাল লাগে। একটা বিষয়ে এ অঞ্চলের মানুষদের ধন্যবাদ দিতে হয় তারা অন্তত ফীডার ক্যানেল গুলোর পানির প্রবাহ নষ্ট করার চেষ্টা করছে না। মনে হয় চাষাবাদের জন্য পানি ব্যাপক ব্যবহার হয় বিধায় নালাগুলোর প্রতি তারা দরদি। তাই স্বচ্ছ পানির ধারায় অনেক মানুষের স্নানরত দৃশ্য মুগ্ধ করে মনে হয়, মুক্ত উল্লাসে নদীর জলে অবগাহন-রত মানুষগুলোর কতই না তৃপ্তি।

          আমরা আমাদের সে সুজলা সুফলা শস্য শ্যমলা গ্রামের পরিবেশ গুলো হয়ত পাব না। কারণ ইটের পর ইটের আগ্রাসনে গ্রামের কোমলতা হারিয়ে যাচ্ছে। এখন আমরা আমাদের পুকুর, খাল, বিল ,নদী ও নালা গুলোর দূষণ বন্ধ করে আমরা যেন তৃপ্তির স্বচ্ছ জলে নাইতে পারি সে আশাই থাকল সকলের কাছে।

No comments:

Post a Comment