আজ থেকে প্রায়
চার বছর আগে আমি একজন সেনা অফিসারের সংস্পর্শে এসেছিলাম। তার যাকাতের টাকার একটা ব্যতিক্রমধর্মী কার্যক্রম দেখে অবাক
হয়েছিলাম।
সে প্রতি বছর
যাকাতের জন্য যা হিসাব করত তা ইসলামী ব্যাংকের তহবিলে জমা রাখত। সে টাকা থেকে যা লভ্যাংশ
পেত তা মাসে মাসে দরিদ্র নিকট আত্মীয়দের প্রদান করত। তার এ পদ্ধতিটি কোন
হুজুর সহি বলেনি। আল্লাহ ভাল জানেন।
তার কথা হল; “আমি প্রথমত: যাকাতের টাকা নিকট
আত্মীয়দের দিব এবং এমনভাবে দিব যেন তারা পরবর্তীতে যাকাত নিতে না হয় এবং স্বাবলম্বী
হতে পারে। আমি ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম একবছর পর দেখলাম
ভ্যান ভেঙ্গে চুরে তার লোহা দিয়ে আমার নিকট আত্মীয় কটকটি খাচ্ছে। আমার কাছে পরের বছর
যথারীতি যাকাত দাবী করছে। এর পর আমি চিন্তা করলাম, মাসে মাসে টাকা দিব” আমি বললাম, এতে তো তাকে স্বাবলম্বী না করে নির্ভরশীল করা হল। সেই অফিসার উত্তর দিল, “স্বাবলম্বী বানানোর বিনিয়োগ করে অপচয় করার চেয়ে আমি বিনিয়োগ
করে তাদের লাভ নিয়মিত দেব সেই ভাল” এ ধরনের যাকাতের বিষয় জানার পর আমার মাথায়
টেকনো যাকাতের আইডিয়া আসল।
ধরুন স্ত্রীর
স্বর্ণের ও আপনার
অন্যান্য বিষয় বাবদ যাকাত হয় বাৎসরিক ২৫,০০০ টাকা।
এখন এই ২৫,০০০ টাকায় বাসস্থানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে বাচার জন্য স্থানীয়ভাবে
নির্মিত ১০০০ ওয়াটের আইপিএস ১২ ভোল্টের ব্যাটারি সহ কিনে নেন। একটি বৈদ্যুতিক মিটার
সেট করে কত বিদ্যুৎ আইপিএস উৎপাদন করেছে তার হিসাব রাখি। মাসের শেষে যত বিদ্যুৎ
উৎপাদিত হয়েছে তা পিডিবি বা পল্লি-বিদ্যুতের
রেট অনুযায়ী যাকাতের টাকায় অর্জিত আয় হিসাবে নির্ধারণ করি। কারণ যাকাতের টাকা বিনিয়োগ
করার কারণে এ লাভটুকু পাচ্ছি। তবে আমরা ব্যাটারির চার্জ করার জন্য যে
বিদ্যুৎ খরচ করছি তা আমরা আমাদের বিনিয়োগের বাইরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে যাকাতের
বাইরের বাড়তি খরচ ধরে নিতে পারি। কারণ যাকাতের টাকা ছাড়া আইপিএস ক্রয় করলে
মুল মিটারের বাড়তি বিলটা অবশ্যই আমাদের দিতেই হত। এছাড়া জেনারেটর চালালে এর চেয়ে বেশী
খরচ হত।
দ্বিতীয় বছরে
২৫,০০০ টাকা দিয়ে আপনি ৪০০ ওয়াটের চারটি সোলার
প্যানেল কিনে নিলেন। আপনার বাসার ছাদের উপর চারটি ১০০ ওয়াট বা দুটি ২০০ ওয়াটের প্যানেল সেট করে নিলেন। এবার এটা আগের বছরের
কেনা আইপিএস এর সাথে জুড়ে দিন। প্যানেল লাগানোর পর আপনার বিদ্যুৎ বিল
কমে আসবে কারণ আপনার আইপিএস চার্জ করার কম খরচটা আপনি যাকাত মিটারের সাথে উৎপাদিত বিদ্যুতের
হিসাবের সাথে জুড়ে দিয়ে সে অনুযায়ী যাকাত হতে লাভ নির্ধারণ করে মাসিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়
করতে পারবেন। তবে আপনার সিস্টেমটা অবশ্যই এমন থাকবে
যাকাত মিটার তখনই চালু থাকবে যখন আইপিএস বা সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। অর্থাৎ আইপিএস এর ১০০০
ওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের লোডে থাকলে যাকাত মিটার রিডিং দিবে না।
৩য় বছরে ২৫,০০০ টাকায় আরো সোলার প্যানেল ক্রয় করে আরো বিদ্যুৎ সাশ্রয়
করা যেতে পারে। আপনার বিদ্যুৎ বিল যদি আসে ২০০০ টাকা
আর সোলার ব্যবহার করে যদি আপনি তিন বছরে ১০০০ টাকা কমাতে পারেন তবে যাকাত বিনিয়োগ থেকে
আপনি প্রতি মাসে কমবেশি ১০০০ টাকা যাকাতের লভ্যাংশ দান করতে পারেন। বছরে ২৪,০০০ টাকা যাকাত বিনিয়োগের আয় আসবে। তিনবছরে প্রায় আপনার
সম্পূর্ণ বাৎসরিক যাকাতের সমান টাকা আপনি বিতরন করতে পারবেন।
৪র্থ বছরে হয়ত
আপনাকে পুনরায় ব্যাটারি কেনার জন্য যাকাত ফান্ড খরচ করতে হবে। এভাবে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ
বিল সাশ্রয় করে মাসিক যাকাতের টাকা বর্ধিত করতে পারেন।
তবে সরকারী বা
অন্যান্য বদলীর চাকুরীজীবী তাদের জন্য পদ্ধতিটি সুবিধাজনক হবেনা কারণ যেহেতু তারা দৌড়ের
উপর থাকেন। যাদের নিজেদের বাসাবাড়ি আছে তার এই টেকনো
যাকাত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতে পারেন।
বাংলাদেশ মধ্যম
আয়ের দেশ হচ্ছে কারণ দেশের অধিকাংশ মানুষ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান,চিকিৎসা
ও শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদাগুলো মধ্যম মানের সচ্ছলতায় মিটাতে পারছে।
যাকাত দশ বছর
আগেও নিকট আত্মীয়দের মাঝে দেয়া যেত এখন তেমনিভাবে যাকাত উপযোগী নিকট আত্মীয় পাওয়া যায়
না।
আমার টেকনো যাকাতের
বিবেচনায় আপনার গরীব আত্মীয়ের কেউ যদি কিস্তিতে সোলার প্যানেল কিনে থাকেন তবে তার পুরো
টাকাটা পরিশোধ করে তাকে ধারমুক্ত করা যায়। কারণ সোলার সিস্টেম অর্থ সাশ্রয়-কারী ব্যবস্থা এতে জেনারেটর বাবদ বা হারিক্যানের কেরোসিনের
খরচ লাঘব হচ্ছে। এতে যে কোন পরিবারের কেরোসিন খরচ সাশ্রয়ের
পাশাপাশি সেভিং বৃদ্ধি পাবে।
অথবা যাদের বিদ্যুৎ
বা সোলার সিস্টেম নাই তাদের সোলার সিস্টেম কিনে দিতে পারেন।
আমরা কয়েকজন
মিলে ছোট গ্রিড সিস্টেম করে একটা লোকালয়কে সংযোগ করতে পারি। হয়তবা ১-২লক্ষ টাকায়
১০-২০টি পরিবারকে আনুমানিক ৬০ ওয়াট করে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিতে পারবেন। এরমধ্যে যারা যাকাত
নিবেন না তারা খরচ দিবেন আর যারা যাকাত নিবেন তারা নিখরচায় বিদ্যুৎ পাবেন। এতে দরিদ্রদের রাতের বেলাও উপার্জনের
কাজ যেমন: সেলাই,খেলনা
তৈরি,হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরি করে রোজগার বাড়াতে পারবে। বাচ্চারা রাতে সোলারের আলোতে পড়াশোনা
করে স্বনির্ভর হতে পারবে।
এ বিষয়ে ধর্মীয়
জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ আমার প্রস্তাবটা ধর্মীয় দৃষ্টিতে সহি আছে কিনা ভাল বলতে পারেন। তবে সামাজিক অবস্থার
উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে টেকনো যাকাত বাড়তে পারে। আপনার একজন দরিদ্র নিকট
আত্মীয় কম্পিউটার শিখেছে। এখন একটি ল্যাপটপ হলে সে আউট সোসিং করে
আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে। আপনি নিশ্চয়ই এ ধরনের টেকনো যাকাতকে নিরুৎসাহী
হবেন না। আসুন আমরা আয় বর্ধক টেকনো যাকাত চালু
করি।
------------------------------------------------------------------------
------------------------------------------------------------------------
কৃষি মজুর আরোজউল্লাকে টেকনো যাকাত প্রদান
মো: আরোজউল্লা পেশায় একজন কৃষি মজুর। তার স্ত্রী পার্ট
টাইম বাসাবাড়িতে ঠিকা কাজ করে। তাদের এক মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়ে
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে । শ্রেণীতে রোল “এক” সম্ভাবনাময় প্রতিভা।
সেখানকার শিমুলিয়া গ্রামে তাদের বসবাস। পড়াশোনা করে হারিকেন জ্বালিয়ে। দীর্ঘ সময়
ইচ্ছে থাকলেও পড়তে পারে না। বাড়ী থেকে মাত্র ৫০০ গজ দুরে পল্লী বিদ্যুৎ এর খুঁটি।
পাঁচ বছর অপেক্ষা করে বিদ্যুৎ না পেয়ে উল্লেখিত শিমুলিয়া গামের অনেকেই আর ডি এফ
মিরপুর,কুষ্টিয়ার শাখার মাধ্যমে সৌর বিদ্যুৎ সংযোগ শুরু
করে।
এই
প্রেক্ষাপটে আমি (মেজর মো: তারেক মাহমুদ সরকার) আমার স্ত্রীর অনুপ্রেরনায় আমার প্রথম টেকনো যাকাতের কার্যক্রম শুরু করি গত ৭ জুলাই
২০১৪ তারিখে আরোজউল্লা বাড়ীতে সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে। ছবিতে আমি(চশমাওয়ালা),আমার
বিজিবি সদস্য,সৌর
বিদ্যুৎ এর লোক,মিরপুর
পল্লী বিদ্যুৎ এর প্রকৌশলী ও খালী-গায়ে টেকনো যাকাত গ্রহণকারী আরোজউল্লা। বাড়ীর
টিনের চালের উপরে ৪০ ওয়াটের সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে, যা দ্বারা ৬০ অ্যাম্পিয়ার এর ব্যাটারি চার্জ হবে এতে
দুইটি তিন ওয়াট এক ফুট টিউব ও দুইটি ছোট ডিসি ফ্যান চলবে।
---------------------------------------------------------
আমি আমার বন্ধুবান্ধবদের গ্রুপ এ “কৃষি মজুর আরোজউল্লাকে টেকনো যাকাত প্রদান” লেখাটি দিলে নীচের মন্তব্যগুলি পাই। তারজন্য সকলকে প্রনঢালা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি:
Abdul Aziz Bhuya' via
Ex-cadets'89 date: 8 July
2014
Good job done.we appreciate ur efforts.
Zillur
Rahman 8 July
2014 14:47
Simply great!! Congratulations!! Alhamdulillah!
নুরুজ্জামান ZAMAN 8 July 2014 14:55
Hi Tech Tareq
Assalamualikum. Praise worthy work to follow your foot print.
Warmest Salams. Tammam O Allahi.
Nuruzzaman
saifuddin4210 via রজত বন্ধন date: date: 8 July 2014
Much appreciated
Saif-uk
Saif-uk
Dosto,
You are a genius. Keep going friend. Definitely you will succeed and many of us will follow you.
Take care,
Arshad
Toronto.
You are a genius. Keep going friend. Definitely you will succeed and many of us will follow you.
Take care,
Arshad
Toronto.
'Akbar' via রজত বন্ধন date: 8
July 2014
Tarek...,
Good but how it's
going to uplift his ROJKAR.....
Akbar...
Tarek
Topu 8 July 2014 18:44
Dosto Tareq
My salute to your good work. You inspired me.
Tarek,Engrs
Shahriyar 8 July
2014 19:00
Dear Tareq,
Alhamdulillah. May Allah Allah always give you to continue with
good work & deeds
Shahriyar
Md
Ashraful Islam 9 July 2014 10:44
Dosto good job done.kind regards Ashraf
md
nurul alam 9 July 2014 12:41
Dear Tareq,
Alhamdulillah. May Allah Allah always give you to continue with
good work & deeds
LT COL NURUL ALAM
ADST
AREA HQ CTG CANTT.
Bangladesh Army.
01711733416
Reazur Rahman <reazurrahman4161@gmail.com date: 9 July 2014 14:03
tareq, really very great job.
Anwarul
Azim 9 July 2014 14:14
Good job done....cont.................
Saif
Islam 9 July 2014 22:35
great job
No comments:
Post a Comment