নিরাপত্তা বাতি সাধারনত বড় বড় পিলারে লাগানো থাকে। আর প্রতিনিয়ত
বড় বড় পিলারে উঠে নস্ট বাতি বদল করা কষ্টকর একটি কাজ। এলইডি লাইট ব্যবহার করে নিরাপত্তা
বাতি বা সিকিউরিটি বাতির বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা তৈরি করলে তা হবে সেই ধরনের ব্যবস্থা,
যাতে কিনা উঁচু স্থানের লাইট ঘন ঘন বদল করার প্রয়োজন পরবে না। এমনকি একবার লাগালে কমপক্ষে
৫০,০০০ ঘণ্টা বা রাতে ১২ ঘণ্টা ব্যবহার করে ১১ বছর একটানা ব্যবহার করা যায়। সাধারণত
সে ধরনের ব্যবস্থা হবে সময় ও যুগোপযোগী। ইনকেনডিসেন্ট বাতিতে ( ফিলামেন্ট বাল্ব) বাতির
বিদ্যুৎ খরচ বেশী ও দ্রুত নষ্ট হওয়ার কারণে তা কমদামী হলেও এ ধরনের লাইটের ব্যবহার
প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। ইদানিং আমরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সাধারণত সিএলএফ
বা এনার্জি সেভিং বাতি ব্যবহার করছি। এখন দেখা যাচ্ছে সিএলএফ থেকেও আরও সাশ্রয়ী ও টেকসই
বৈদ্যুতিক লাইট বাজারে এসেছে। টর্চের এলইডি ব্যবহারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে । এখন
বাজরে আগের ফিলামেন্ট বাল্বের টর্চ খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন। বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহারের
কারণে এলইডি বাতি বিপ্লব সৃষ্টি করেছে।
Click the photo for enlarge
বিদ্যুৎ
ব্যবহারে আমরা সচেতন হওয়ায় আমরা সিএলএফ বা এনার্জি লাইট অপেক্ষা এখন এলইডি লাইট
বেশী গুরুত্ব দেয়া শুরু করতে পারি। এলইডি লাইট সিএলএফ বা এনার্জি সেভিং টিউব
লাইট অপেক্ষা অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এছাড়া এলইডি লাইটের সাধারণত সেলফ লাইফ দশ
বছর ধরা যায়। অন্যদিকে সিএলএফ বা এনার্জি লাইট ভালভাবে ব্যবহার করলে তিন বছর
নির্বিঘ্নে ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করা যায়। তবে সার্কিট নষ্ট হতে পারে। আমাদের
দেশে মেকানিকরা ২০/৩০ টাকার বিনিময়ে রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর ও ট্রানজিস্টার বদল করে এ ধরনের লাইট মেরামত
করে থাকে। তাই দেখা যায় এক বছর ওয়ারেন্টি পিরিয়ড অতিক্রান্ত হওয়ার পর নষ্ট লাইট
স্থানীয়ভাবে মেরামত করা যাবে। এলইডি লাইট ৩ ওয়াট, ৫ ওয়াট, ৭ ওয়াট, ৯ ওয়াট ও ২০ ওয়াটের টিউবলাইট
ইত্যাদি বিভিন্ন ওয়াটে পাওয়া যায়। এ ধরনের লাইট হয়তবা সিএলএফ লাইটের তিনগুণ বেশী
দাম সম্পন্ন। তবে শীঘ্রই চাহিদা বা উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে এলইডি লাইটের দামও
ব্যাপক হারে কমতে থাকবে। তবে এনার্জি লাইট ৩ বছর আয়ু-সম্পন্ন হলেও এলইডি লাইট দশ
বছর আয়ু-সম্পন্ন হওয়ার কারণে এককালীন অধিক পরিমাণ (প্রায় তিনগুণ দাম) ইনভেষ্ট
হয়তবা গ্রহণযোগ্য ধরা যায়।
যে
সমস্ত স্থানে আমরা আইপিএস এর মাধ্যমে বাতি জ্বালাচ্ছি সে সমস্ত স্থানে কম বিদ্যুৎ
খরচ করার জন্য এলইডি লাইট ব্যবহার করাটা সাশ্রয়ী। মনে করুন আপনার বাসস্থানে ৫টি ২০
ওয়াটের সর্বমোট ১০০ ওয়াট খরচের পরিবর্তে আপনি ৫ x ৭=৩৫ ওয়াট অর্থাৎ তিনভাগের একভাগ বিদ্যুৎ খরচে ৫টি এলইডি
লাইট ব্যবহার করতে পারেন।
বর্তমানে
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে গ্রিন হাউজ এফেক্ট একটি মারাত্মক
সমস্যা। তাই বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে। এনার্জির অন্যতম ব্যবহার হচ্ছে রাতের
আধার দূরীকরণ। আর তাই বাতি জালানো জন্য বর্তমানে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ব্যবস্থা হল এলইডি
লাইট । এলইডি লাইট ব্যবহারে বিদ্যুতের ব্যবহার সিএলএফ লাইট থেকে কমে আসবে। এলইডি
লাইটের দাম বেশী হলেও বাহিরের লাইট, নিরাপত্তা বাতি ও অন্যান্য স্থানে যেখানে দীর্ঘ সময় লাইট
জ্বালিয়ে রাখতে হয় সে সমস্ত স্থানে এলইডি লাইট লাগানো জরুরী। সিএলএফ লাইটে মানুষের
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক মাকার্রী আছে যা কিনা এলইডি লাইটে নেই।
অনেক
সময় সোলার সিস্টেমে ইনভার্টর ব্যবহার করে সোলার ব্যবস্থা থেকে ১২ ভোল্টের ব্যাটারি
চার্জ করা যায়। চার্জকৃত ১২ ভোল্টের ব্যাটারি থেকে ইনভারর্টারের মাধ্যমে ২২০ ভোল্ট
এসি তৈরি করা যায়। এসি বিদ্যুৎ দিয়ে এলইডি লাইট ব্যবহার করে কম বিদ্যুৎ খরচে
আশানুরূপ আলো পাওয়া যায়। সোলার সিস্টেমে ব্যাটারী থেকে ১২ ভোল্টের মাধ্যমে সরাসরি
এলইডি লাইট জ্বালানো যাবে। এতে বরং সুবিধা হবে কারণ ইনভার্টারের বিদ্যুতের অপচয়
থেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। জেনারেটরের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ও আইপিএস এর মাধ্যমে
উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহারে আমরা নির্ধিদ্বায় এলইডি লাইট ব্যবহার করতে পারি।
এলইডি
লাইট বর্তমানে আমাদের দেশের জন্য আমদানি নির্ভর একটি পণ্য। তবে স্থানীয়ভাবে
সোলার সিস্টেমের জন্য এখন এলইডি লাইট আমাদের দেশেও তৈরি হচ্ছে। যেদিন আমরা
বাংলাদেশে এলইডি লাইট তৈরি করতে পারব তখন এর দামও কমে আসবে। এলইডি লাইট ব্যবহারে
বর্তমানে একমাত্র প্রতিবন্ধকতা হলো মূল্য। এর মূল্যটা কমাতে পারলে এ ধরনের লাইটকে
জনপ্রিয় করা যাবে। এলইডি লাইট ব্যবহারে দীর্ঘদিন ধরে যে বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে তার
মূল্য দিয়ে এলইডি লাইটের ক্রয় করতে যে অতিরিক্ত খরচ হবে তা পুষিয়ে নেয়া
যাবে।নিরাপত্তা বাতি হিসাবে এর জুড়ি মেলা ভার। আসুন আমরা সবাই বাসাবাড়িতেও বিদ্যুৎ
সাশ্রয়ী এলইডি লাইট ব্যবহার শুরু করি।
No comments:
Post a Comment